বিনোদন

শাহরুখের সংস্থা রেড চিলিজ ও নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে সমন জারি দিল্লি হাইকোর্টের

Advertisement

দিল্লি হাইকোর্ট বলিউডের কিং শাহরুখ খানের প্রযোজনা সংস্থা রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট এবং জনপ্রিয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে। শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান খান পরিচালিত ও রেড চিলিজ প্রযোজিত ওয়েব সিরিজ ‘দ্য ব্যাডস অফ বলিউড’-এ সাবেক এনসিবি কর্মকর্তা সমীর ওয়াংখেড়েকে ব্যঙ্গ করার অভিযোগে এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আগামী ৩০ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে আদালত।

মামলার পেছনের কারণ ও অভিযোগের বিবরণ

ভারতের নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) সাবেক জোনাল ডিরেক্টর সমীর ওয়াংখেড়ে এই মামলার বাদী। তাঁর দাবি, ‘দ্য ব্যাডস অফ বলিউড’ সিরিজে এমন একটি চরিত্র দেখানো হয়েছে, যাকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং চরিত্রটির চেহারা, পোশাক ও আচরণ তার সাদৃশ্যপূর্ণ।

ওয়াংখেড়ে অভিযোগ করেছেন, এই সিরিজে তাকে হেয় ও অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে তিনি শাহরুখ খান, গৌরী খান ও আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে ২ কোটি রুপির মানহানির মামলা দায়ের করেছেন। আদালত এই অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (৮ অক্টোবর) রেড চিলিজ ও নেটফ্লিক্সকে সমন জারি করে।

আদালতের মন্তব্য ও পরবর্তী পদক্ষেপ

দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছে, মামলার প্রাথমিক শুনানিতে উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনা হবে। আদালত বলেছে, “অভিযুক্ত পক্ষের জবাব শোনার পর পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে।”

তবে এর আগেও আদালত মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তবুও নতুন শুনানির নির্দেশের মাধ্যমে মামলাটি আবারো আলোচনায় এসেছে।

‘দ্য ব্যাডস অফ বলিউড’ সিরিজে বিতর্কিত দৃশ্য

‘দ্য ব্যাডস অফ বলিউড’ হল আরিয়ান খানের পরিচালিত প্রথম ওয়েব সিরিজ, যা রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজনা করেছে এবং নেটফ্লিক্সে প্রকাশিত হয়েছে। সিরিজে এক এনসিবি কর্মকর্তাকে দেখানো হয়েছে, যিনি ‘সত্যমেব জয়তে’ বলার পর মধ্যমা আঙুল দেখান।

সমীর ওয়াংখেড়ের দাবি, ভারতের জাতীয় প্রতীক সংবলিত এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহারের পরে ওই ভঙ্গি প্রদর্শন করা দেশের “জাতীয় সম্মানের প্রতি অবমাননা”। তার মতে, এটি ১৯৭১ সালের ‘প্রিভেনশন অব ইনসাল্টস টু ন্যাশনাল অনার অ্যাক্ট’-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

আরিয়ান খানের পূর্ববর্তী বিতর্ক: পটভূমি

২০২১ সালে মুম্বইয়ের একটি ক্রুজ পার্টিতে মাদককাণ্ডের অভিযোগে শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান খানকে গ্রেপ্তার করেছিল এনসিবি। সেই সময় সমীর ওয়াংখেড়েই ছিলেন এনসিবির জোনাল ডিরেক্টর।

আরিয়ানকে ২৫ দিন জেলে থাকার পর জামিন দেওয়া হয়। পরে প্রমাণের অভাবে মামলা থেকে মুক্তি পান তিনি। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ওয়াংখেড়ে ও খানের পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়।

এখন, তিন বছর পর, আরিয়ানের পরিচালিত সিরিজকে কেন্দ্র করে সেই পুরোনো দ্বন্দ্ব ফের সামনে এসেছে।

রেড চিলিজ ও নেটফ্লিক্সের অবস্থান

রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট এখনো এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। নেটফ্লিক্সের তরফ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে প্রযোজনা সংস্থার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, সিরিজের কোনো চরিত্রই বাস্তব ব্যক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। চরিত্রটি সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত, এবং এটি ব্যঙ্গাত্মকভাবে সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে — কারো ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বিশেষজ্ঞ মত

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মামলাকে ঘিরে তীব্র আলোচনার জন্ম হয়েছে। একাংশ বলছে, ওয়াংখেড়ের অভিযোগের যথার্থতা থাকলেও শিল্পের স্বাধীনতা রক্ষাও জরুরি।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আদালতকে এখানে খুব সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, যদি কোনো কল্পিত চরিত্র বাস্তব কারও সঙ্গে মিল পায়, তা প্রমাণ করা আইনি দিক থেকে কঠিন।

মুম্বইভিত্তিক মিডিয়া বিশ্লেষক নীরজ পাটিল বলেন, “এই মামলা বলিউড ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের জন্য একটি নজির তৈরি করতে পারে। আদালতের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে কনটেন্ট নির্মাণের স্বাধীনতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।”

আদালতের রায়ের অপেক্ষায় বলিউড

আগামী ৩০ অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে রেড চিলিজ ও নেটফ্লিক্সকে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।

বিনোদনবিশ্বে এখন দৃষ্টি সেই দিনের দিকে — আদালত কি মামলাটিকে গ্রহণযোগ্য ঘোষণা করবে, না কি খারিজ করবে, সেটিই এখন আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আদালতের সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, এই মামলার ফলাফল ভবিষ্যতে বলিউডের সৃজনশীল স্বাধীনতা এবং বাস্তব চরিত্র অনুপ্রাণিত কনটেন্ট নির্মাণের নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

‘দ্য ব্যাডস অফ বলিউড’-এর বিতর্ক শুধু একটি ওয়েব সিরিজ বা একটি মামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিনোদন জগতের শিল্পীসত্তা বনাম ব্যক্তিগত সম্মান—এই পুরোনো বিতর্ককে নতুন করে সামনে এনেছে।

তবে শেষ পর্যন্ত আদালত কী সিদ্ধান্ত দেয়, সেটিই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতে সৃজনশীল স্বাধীনতা ও আইনি সীমারেখার ভারসাম্য কেমন থাকবে।

এম আর এম – ১৬৭৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button