শিক্ষা

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার বড় পরিবর্তন: লিখিত অংশ যুক্ত, চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা

Advertisement

সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের সব মেডিকেল কলেজে একযোগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫। এবার এই পরীক্ষায় শুধু এমসিকিউ নয়, লিখিত অংশও থাকবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

লিখিত অংশ যুক্ত হচ্ছে, সীমিত পরিসরে

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, “আগামী ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “বছরের এই ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো লিখিত অংশ সংযোজন করা হচ্ছে। তবে এটি সীমিত পরিসরে থাকবে। লিখিত অংশে সাধারণত ১০ থেকে ২০ নম্বর পর্যন্ত প্রশ্ন থাকতে পারে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।”

ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ও আবেদন প্রক্রিয়া

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, পরীক্ষার প্রায় দেড় মাস আগে আবেদনপত্র, সময়সূচি, এবং অন্যান্য নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে।
এর মধ্যে থাকবে:

  • অনলাইন এবং অফলাইন আবেদনপত্র পূরণের নিয়ম
  • পরীক্ষার সিলেবাস ও বিষয়ভিত্তিক নির্দেশিকা
  • পরীক্ষার কেন্দ্র ও আসনবিন্যাস
  • নিয়মিত সময়সূচি এবং ফলাফল প্রকাশের তথ্য

এছাড়াও, পরীক্ষার্থীদের জন্য নম্বরায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি আগেই স্পষ্ট করা হবে। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্ব এবং প্রস্তুতির কারণে এই ধাপগুলো বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শীর্ষ কর্মকর্তারা

৬ অক্টোবরের বৈঠকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এবং বিএমডিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • বিএমডিসির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম
  • স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মল্লিকা খাতুন
  • স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন মাতুব্বর

বৈঠকে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি, পরীক্ষার ফরম্যাট, প্রশ্নপত্র এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

পরীক্ষা ফরম্যাটে কী কী পরিবর্তন আসছে?

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় এই বছর মূলত দুটি বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে:

  1. লিখিত অংশ সংযোজন
    • সীমিত সংখ্যা: ১০-২০ নম্বরের প্রশ্ন
    • বিষয়: প্রাথমিক চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান
    • মূল্যায়ন: বিএমডিসি নির্ধারণ করবে
  2. একযোগে পরীক্ষা
    • দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে একসাথে অনুষ্ঠিত হবে
    • পরীক্ষার সময়সূচি: সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা (প্রাথমিক অনুমান)

এছাড়া, পরীক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরীক্ষার হলে নিয়ে আসতে পারবে না।

আগের বছরের তুলনায় কি নতুন চ্যালেঞ্জ?

গত বছর শুধুমাত্র এমসিকিউ (MCQ) ভিত্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এবার লিখিত অংশ সংযোজন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের তৈরি হওয়ার ধরণও পরিবর্তিত হবে।

  • এমসিকিউতে সাধারণত দ্রুত উত্তর দেওয়ার দক্ষতা লাগে
  • লিখিত অংশে লেখার স্পষ্টতা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা মূল্যায়িত হবে
  • শিক্ষার্থীদের সময় ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ লিখিত অংশের জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ থাকবে

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের গভীরভাবে বিষয় বোঝার দিকে মনোযোগী করবে

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রস্তুতি

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে যে, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, কেন্দ্রবিন্যাস, এবং ফলাফল প্রকাশের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হবে।

তাদের প্রস্তুতি অন্তর্ভুক্ত:

  • প্রশ্নপত্র নিরাপদভাবে সংরক্ষণ ও বিতরণ
  • কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিদর্শক এবং কর্মকর্তা নিয়োগ
  • ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন ফলাফল প্রকাশের প্রস্তুতি

শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা নতুন নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন:

  • বিষয়ভিত্তিক পরিকল্পনা: এমসিকিউ ও লিখিত উভয় অংশের জন্য প্রস্তুতি
  • সময় ব্যবস্থাপনা: প্রশ্নপত্র সমাধানের জন্য সময় ভাগ করা
  • লিখিত দক্ষতা উন্নয়ন: সংক্ষিপ্ত, পরিষ্কার ও সঠিক উত্তর লেখার অনুশীলন
  • প্র্যাকটিস পরীক্ষা: আগের বছরের প্রশ্নপত্র ও মক টেস্ট সমাধান

এছাড়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরও শিক্ষার্থীদের জন্য নমুনা প্রশ্নপত্র প্রকাশ করতে পারে।

সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের প্রভাব

বাংলাদেশে প্রায় ৩৫টি সরকারি ও ৭৫টিরও বেশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। একযোগে ভর্তি পরীক্ষার ফলে:

  • সকল কলেজে সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে
  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও স্বচ্ছ ও ন্যায্য হবে
  • ভর্তি পরীক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে

এছাড়াও, লিখিত অংশ সংযোজন পরীক্ষার শিক্ষাগত মান ও শিক্ষার্থীদের বিষয় ভিত্তিক দক্ষতা যাচাই করতে সাহায্য করবে।

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার এই নতুন নিয়ম শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে। তবে একই সঙ্গে এটি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এবং বিএমডিসি নিশ্চিত করছে যে, পরীক্ষা ন্যায্য, স্বচ্ছ ও নিরাপদ হবে।

এই বছর ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষার প্রস্তুতি এখনই শুরু করা উচিত। শিক্ষার্থীদের সচেতনভাবে পড়াশোনা, নিয়মিত অনুশীলন এবং সময় ব্যবস্থাপনার প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

MAH – 13223 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button