
বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, গত আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮.৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচের চাপ আরও বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতির সাম্প্রতিক চিত্র
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্যমূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৬৪ শতাংশ। অন্যদিকে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৯৮ শতাংশে এসেছে। খাদ্যমূল্যস্ফীতি বাড়লেও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দামের বৃদ্ধি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে পণ্যের দাম ওঠানামা করছে। তবে ৮ শতাংশের ঘরে থাকার কারণে অর্থনীতির মূল দিকটিতে সাময়িক স্থিতিশীলতা দেখা যায়।
মূল্যস্ফীতি ও সাধারণ মানুষের প্রভাব
মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলে। যদি আয় বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির হার অনুযায়ী না হয়, তবে মানুষকে খরচের জন্য ধার নিতে হয় বা খাদ্য, পোশাক ও যাতায়াতের খরচে কাটছাঁট করতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, গত বছর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১০০ টাকার পণ্যের জন্য আজ আপনাকে ১০৮.৩৬ টাকা খরচ করতে হবে। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ টাকার জন্য ৮.৩৬ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।
মূল্যস্ফীতির ধারাবাহিকতা
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০.০৩ শতাংশে। ২০২৪ সালের জুলাইতে খাদ্যমূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ১৪.১০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সুদের হার বৃদ্ধি, শুল্ক-কর কমানো, এবং নিত্যপণ্য আমদানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাজারে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিতে প্রভাব ও বিশ্লেষণ
মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি গৃহস্থালী ও ছোট ব্যবসায়ীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে পরিবারের বাজেট ভারী হয় এবং ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতি শুধুমাত্র জিনিসপত্রের দাম বাড়া নয়, বরং মানুষের প্রকৃত আয় হ্রাসের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। তাই আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা এবং নিয়ন্ত্রিত মূল্যে বাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে।
সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ ও সরকারি উদ্যোগ
অন্তর্বর্তী সরকার নিত্যপণ্যে কর ও শুল্ক কমিয়েছে। পেঁয়াজ, আলু, তেল, ডিমের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে সুদের হার বৃদ্ধি করে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা চলছে।
এছাড়াও, বাজার পর্যবেক্ষণ এবং স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যাতে কৃত্রিম দাম বৃদ্ধির মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকল্পবদ্ধ নীতি প্রয়োজন। তারা বলেন, “মূল্যস্ফীতি হ্রাসের জন্য সুদের হার, করনীতি ও আমদানি ব্যবস্থার সমন্বয় করা অত্যন্ত জরুরি।”
বাজার বিশ্লেষকরা আরও জানাচ্ছেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি দীর্ঘমেয়াদে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমাতে পারে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮.৩৬% এ পৌঁছানো বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সতর্কবার্তা। সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী এবং নীতি নির্ধারক সকলের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি কিভাবে পরিবর্তিত হবে তা নির্ভর করছে সরকারি নীতি, বাজারের স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধির ওপর।
এম আর এম – ১৬৪৮,Signalbd.com