
কক্সবাজার, ৮ জুলাই ২০২৫ – দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারের হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতে ভোররাতে গোসল করতে নেমে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এবং আরও দুই জন নিখোঁজ রয়েছেন। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং উদ্ধার সংস্থাগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করলেও, উত্তাল সাগরের কারণে উদ্ধারকাজ জটিলতায় পড়েছে।
ঘটনাস্থলের বিবরণ
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) শাহিদুল আলম জানান, ভোরবেলা ৫ জন পর্যটক হিমছড়ি সৈকতে ঘুরতে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনজন সমুদ্রের জলে গোসল করতে নেমে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করলেও, তীব্র স্রোতের কারণে ৩ জনই পানির নিচে হারিয়ে যান। পরে তাদের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়, আর দুই জনের খোঁজ এখনও মেলেনি।
উদ্ধার কার্যক্রম ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
ঘটনার খবর পেয়ে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। তবে সাগরের উত্তাল অবস্থার কারণে উদ্ধারকাজে ব্যাপক বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। উদ্ধারকারীরা রাতভর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিখোঁজ দুই জনকে খুঁজে বের করার জন্য। নিহত এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। প্রশাসন এবং স্থানীয়রা মিলে তাদের পরিবারকে দ্রুত খবর দেওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হিমছড়ি সৈকতের ঝুঁকি ও সাবধানতার আহ্বান
কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকত সবসময় পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হলেও, এখানকার জলের স্রোত প্রায়ই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বর্ষাকালে এবং ভোর বা সন্ধ্যার সময় সমুদ্রের ঢেউ তীব্র হয়ে ওঠে, যা অজ্ঞানতার কারণে অনেক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কক্সবাজারে সমুদ্র ডুবে প্রাণহানির ঘটনা নিয়মিত ঘটছে, যা পর্যটকদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্র সৈকতে যেসব এলাকায় ঝুঁকি বেশি, সেগুলোতে সাঁতার কাটা উচিত নয়। তাছাড়া, অতিরিক্ত মদ্যপান বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে সমুদ্রের জলে নামা উচিত নয়। পর্যটকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে নিরাপত্তা বাড়াতে, সতর্কতা সংকেত স্থাপন করতে এবং জরুরি উদ্ধার সেবা আরও কার্যকর করতে হবে।
অন্যান্য সাম্প্রতিক সমুদ্র দুর্ঘটনার তুলনা
বাংলাদেশের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডুবে যাওয়া ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কক্সবাজারের উপকূলে একই ধরনের দুর্ঘটনায় ৫ জন পর্যটক প্রাণ হারিয়েছিলেন। গত বছর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতেও স্রোতের টানে একদল পর্যটক বিপদের মুখে পড়েছিলেন। এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পর্যটকদের সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা খুব জরুরি।
কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সৈকতে নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপন, লাইফগার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সাঁতার কাটা নিষেধাজ্ঞার জোন চিহ্নিতকরণ ইত্যাদি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও পর্যটকদের মাঝে সচেতনতার অভাব এবং ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা কমেনি। প্রশাসন ও স্থানীয় সমাজের সমন্বয়ে একটি ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা খুবই জরুরি।
পরিবার ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
নিহত ও নিখোঁজদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে স্থানীয়রা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই দাবি করেছেন, সমুদ্র সৈকতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে এবং পর্যটকদের ব্যাপকভাবে সতর্ক করতে হবে যাতে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা আর না ঘটে।
কক্সবাজারের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয় সমুদ্রের বিপদের কথা। আমাদের উচিত সমুদ্রকে আনন্দের উৎস হিসেবে দেখার পাশাপাশি তার ঝুঁকিগুলো বোঝা এবং সেগুলো থেকে সাবধান থাকা। পর্যটক হিসেবে নিজে সতর্ক থাকা, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা এবং নিরাপত্তার জন্য নিয়ম মেনে চলাই পারে দুর্ঘটনা প্রতিরোধের একমাত্র পথ।