
পার্বত্য চট্টগ্রামের পানছড়ি উপজেলায় এক গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ এবং যোগাযোগের সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, অভিযানটি আজ ভোর পাঁচটায় সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালনা করা হয়। পানছড়ির যুবনেশ্বরপাড়া এলাকার গভীর জঙ্গলে এই গোপন আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। অভিযান শুরু হতেই ইউপিডিএফের শীর্ষ গ্রুপ কমান্ডার সুমেন চাকমা নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। এরপর সেনাবাহিনী স্থল তল্লাশি চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র এবং সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
উদ্ধারকৃত সামগ্রী ও অস্ত্র
আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অভিযান থেকে নিম্নলিখিত সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে:
- ১টি পিস্তল
- ১টি ম্যাগাজিন
- ২টি গুলি (অ্যামোনিশন)
- ১৫টি ব্যানার
- ২টি ওয়াকিটকি চার্জার
- ২টি মোবাইল ফোন
- ধারালো অস্ত্র
- অন্যান্য বিভিন্ন সরঞ্জাম
এই সরঞ্জামগুলো ইউপিডিএফের নাশকতার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল বলে সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয়দের ওপর প্রভাব ও জোরপূর্বক নাশকতা
আইএসপিআর জানিয়েছে, ইউপিডিএফ স্থানীয় নারী, পুরুষ এবং শিক্ষার্থীদের জোর করে সেনাবিরোধী স্লোগান দিতে বাধ্য করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, তারা স্থানীয় জনগণকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে শিশু ও তরুণদেরও নাশকতায় অংশগ্রহণে প্ররোচিত করছে।
একটি বিশেষ সূত্র জানায়, “ইউপিডিএফ পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তারা শুধু অস্ত্রের মাধ্যমে নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।”
সেনাবাহিনীর সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা
অভিযানের পরে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইউপিডিএফের পালিয়ে যাওয়া সশস্ত্র সদস্যদের খুঁজে বের করার অভিযান চলমান রয়েছে। সেনাবাহিনী স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
পানছড়ি উপজেলার জনগণও সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রশংসা করেছেন। তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই ধরনের অভিযান এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনবে এবং সাধারণ মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতি
পার্বত্য চট্টগ্রাম বহু বছর ধরে সশস্ত্র সংগঠন এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে উত্তেজনার মুখোমুখি। ইউপিডিএফের মতো গ্রুপগুলো এলাকায় রাজনৈতিক ও সশস্ত্র প্রভাব বিস্তার করতে চেষ্টা করে। স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী একত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি মনিটরিং করছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযানই এই ধরনের সশস্ত্র কার্যক্রম দমন করতে কার্যকর। তারা বলছেন, “পরিকল্পিত অভিযান এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এই ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব নয়।”
সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা জানিয়েছে, “সেনাবাহিনী আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই অভিযান চালিয়েছে। আমরা চাই আমাদের এলাকায় শান্তি ফিরে আসুক।” স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই অভিযান শিশুদের ওপর দমনাত্মক প্রভাব কমাবে এবং তারা স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ফিরতে পারবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউপিডিএফের মতো সংগঠনরা এলাকায় নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে সহিংসতা, জোরপূর্বক স্লোগান, এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ব্যবহার করে। তাই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে সরকার, সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে।
আইএসপিআরের বিবৃতি
আইএসপিআর জানিয়েছে, “সেনাবাহিনী সর্বদা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে। ইউপিডিএফ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা স্থানীয় জনগণকে আশ্বস্ত করি যে, তাদের জীবন ও সম্পদ নিরাপদে থাকবে।”
আইএসপিআরের আরও জানানো হয়েছে, অভিযান চলাকালীন সময়ে কোনো সাধারণ মানুষ আহত হয়নি। উদ্ধারকৃত অস্ত্র এবং সরঞ্জাম আইনের আওতায় কার্যক্রমে ব্যবহার করা হবে।
সামগ্রিক প্রভাব
এই অভিযান পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী একযোগে কাজ করলে, সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব কমানো সম্ভব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে এমন অভিযান নিয়মিতভাবে পরিচালনা করলে, পার্বত্য চট্টগ্রাম আবার শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ অঞ্চলে পরিণত হবে। স্থানীয় জনগণও আশা করছে যে, তারা বিনা ভয়ে ব্যবসা, শিক্ষা এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে।
MAH – 13191 I Signalbd.com