শিক্ষা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়নি

Advertisement

আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি তুলে দেওয়া হবে—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু শিক্ষা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ তথ্য সম্পূর্ণ ভুয়া এবং এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নেয়নি।

সম্প্রতি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে, আগামী আগস্ট মাস থেকে শনিবার স্কুল খোলা থাকবে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। অনেকেই ভেবেছেন, সাপ্তাহিক ছুটি কমিয়ে শুক্রবার ছাড়া আর কোনো ছুটি থাকবে না।

শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেন। তারা বলেছেন, শনিবারের ছুটি বাতিলের কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি।

শিক্ষা প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক ইউনুছ ফারুকী স্পষ্টভাবে জানান, “আগস্ট মাস থেকে শনিবারের ছুটি তুলে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব তথ্য ঘুরছে, সেগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া।”

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি অ্যান্ড অপারেশনের পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল হাসানও একই কথা বলেন। তিনি জানান, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব বা আলোচনা হয়নি।

পেছনের ঘটনা ও গুজবের সূত্রপাত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়া নতুন কিছু নয়। এর আগেও পাঠ্যসূচি পরিবর্তন, পরীক্ষা পদ্ধতি বদল বা শিক্ষাবর্ষের ছুটির তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তিকর পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। এবারও একই ধরণের বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে শনিবারের ছুটি নিয়ে।

কর্তৃপক্ষের মতে, কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি হয়তো মনগড়া তথ্য ছড়াচ্ছে, যার ফলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটি

দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি রয়েছে—শুক্রবার ও শনিবার। এই সিদ্ধান্ত বহুদিন ধরে চালু আছে এবং সরকার এখন পর্যন্ত তা পরিবর্তন করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এই দুই দিনের ছুটি মানসিক ও শারীরিক বিশ্রামের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শনিবারের ছুটি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার বাইরে ব্যক্তিগত শখ ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দেয়।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

শনিবারের ছুটি বাতিলের খবর ভাইরাল হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের মন্তব্য দেখা গেছে। অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যদি শনিবার স্কুল খোলা থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের চাপ আরও বাড়বে।

একজন অভিভাবক লিখেছেন, “আমাদের সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে হলেও দুই দিনের ছুটি বজায় রাখা উচিত।” অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থীও মন্তব্য করেছেন যে, তারা এই খবর শুনে হতাশ হয়েছিলেন, তবে কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট ব্যাখ্যা তাদের আশ্বস্ত করেছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো তথ্য যাচাই না করে শেয়ার করা উচিত নয়। শিক্ষা নীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া হয় না; এর আগে সরকারীভাবে ঘোষণার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক বলেন, “এ ধরনের বিভ্রান্তি এড়াতে সঠিক তথ্য যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে যেন গুজবের কারণে কোনো অস্থিরতা না হয়।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও করণীয়

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির নিয়ম পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই। ভবিষ্যতে যদি এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে সেটি অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সবার আগে জানিয়ে দেওয়া হবে।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, এই ধরনের গুজব রোধ করতে সঠিক তথ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। একই সঙ্গে সচেতন থাকতে হবে, যেন কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার না করে।

শেষ কথা 

সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত “শনিবারের ছুটি বাতিল” সংক্রান্ত খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এখন পর্যন্ত দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে শুক্রবার ও শনিবার দুই দিনের ছুটি বহাল থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন, যাচাই-বাছাই না করে কোনো খবর বিশ্বাস না করতে এবং বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে।

এম আর এম – ০৫৬৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button