আঞ্চলিক

সদরঘাট পাইকারি বাজারে আগুন, ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় নিয়ন্ত্রণে

Advertisement

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র সদরঘাটের বিখ্যাত পাইকারি বাজারে আজ সকাল ৮টার দিকে আগুনের ঘটনা ঘটে। দ্রুত খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সৌভাগ্যক্রমে, আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার লিমা খানম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সকাল ৮টা ৫ মিনিটে সদরঘাট পাইকারি বাজারে আগুন লাগার খবর তাদের কাছে আসে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাঁচটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে, এবং প্রায় ৪৮ মিনিটের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি

প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানান, আগুনের প্রকৃত কারণ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। তবে তারা বলছেন, সদরঘাটের পাইকারি বাজার পুরনো কাঠামো ও তাত্ত্বিকভাবে সল্প বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও এখনও নির্ধারিত হয়নি, তবে প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, বাজারের কয়েকটি দোকান এবং পণ্য সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সদরঘাট পাইকারি বাজার ঢাকা শহরের সবচেয়ে ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে পোশাক, বস্ত্র, ইলেকট্রনিক্স, হার্ডওয়্যার এবং বিভিন্ন পাইকারি পণ্য বিক্রি হয়। প্রতিদিন শত শত ব্যবসায়ী ও ক্রেতা এই বাজারে ভিড় করেন। এমন একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আগুনের ঘটনা আশঙ্কাজনক হলেও ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপ বড় ধরনের বিপর্যয় রোধ করেছে।

ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম

ফায়ার সার্ভিসের লিমা খানম জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পাঁচটি ইউনিটের ২০-২৫ জন কর্মী অংশগ্রহণ করেন। আগুন লাগার সময় বাজারের দোকানীরা আতঙ্কিত হয়ে পালাতে শুরু করলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। তিনি আরও বলেন, “আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় আমরা প্রথমেই বাজারের চারপাশে জনসাধারণকে সরিয়ে নিয়েছি। এতে বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।”

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা আরও জানান, সদরঘাট বাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি যথেষ্ট আধুনিক। তাদের কাছে পর্যাপ্ত জল সরবরাহ ব্যবস্থা এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। তবে বাজারের তলা, দোকানগুলোর সামগ্রী ও পুরনো বৈদ্যুতিক সংযোগগুলোর কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

সদরঘাটের বাজার: ঝুঁকি ও নিরাপত্তা

সদরঘাটের পাইকারি বাজার ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ লেনদেনের জন্য ভিড় করেন। বাজারের অনেক দোকান পুরনো কাঠামোতে নির্মিত, এবং বৈদ্যুতিক সংযোগও অনিয়মিত। এ কারণে আগুনের ঝুঁকি সব সময় থাকে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজারগুলোর বৈদ্যুতিক সুরক্ষা ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা শক্তিশালী না হলে এমন দুর্ঘটনা বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। আগুন লাগার সময় বাজারের সরঞ্জাম, পণ্য ও কাঠামোর দ্রুত ক্ষতি হয় এবং ব্যবসায়ীরা সাময়িক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।

আগুনের প্রভাব ও ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার সময় বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তারা হঠাৎ আগুনের ধোঁয়া দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। “আমি দোকান থেকে দৌড়ে বের হতে বাধ্য হই, ধোঁয়ার কারণে আমাদের পণ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,” বলেন একজন ব্যবসায়ী। অন্য একজন বলেন, “ফায়ার সার্ভিস দ্রুত পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনায় আমরা বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছি।”

বাজারের এলাকাবাসীও এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়েছেন। তারা মনে করছেন, বাজারে নিয়মিত অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকলে এমন ঘটনা সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আগাম সতর্কতা ও পরবর্তী পদক্ষেপ

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বাজারের মালিক ও দোকানীদের প্রতি সতর্কবার্তা দেন, যাতে তারা অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত ব্যবস্থা নেন। তারা পরামর্শ দেন, বৈদ্যুতিক তারের নিয়মিত পরীক্ষা, আগুন নেভানোর যন্ত্র সরবরাহ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা থাকা জরুরি।

বাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ভবিষ্যতে আরও আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। এছাড়া, বাজারে কর্মরত ব্যবসায়ীদেরও অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

সদরঘাট পাইকারি বাজারে আগুনের ঘটনা যদিও হতাহতের ঘটনা ঘটায়নি, তবে এটি ঢাকার ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকার ঝুঁকিকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপ এবং বাজারের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

এ ঘটনায় মূল শিক্ষাটি হলো, ব্যস্ত ও পুরনো কাঠামোর বাজারে নিয়মিত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা একত্রে কাজ করতে হবে।

MAH – 13183 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button