
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সম্পত্তি দখলকে কেন্দ্র করে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার চাপরতলা ইউনিয়নের তারাউলা গ্রামে নিজের বাবার হাত-পায়ের রগ কেটে গুরুতর আহত করেছে এক ছেলে। সোমবার বিকেলে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বাবার ওপর নৃশংস হামলার ঘটনা
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আহত বৃদ্ধের নাম ধন মিয়া (৭৮)। তিনি বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার দিন সোমবার বিকেলে বাড়ির পাশে মসজিদের সামনে একা পেয়ে প্রথম স্ত্রীর ঘরের তৃতীয় ছেলে মাসুক মিয়া ধারালো দা দিয়ে তার বাবার হাত-পায়ে কোপাতে থাকে।
হামলার ফলে ধন মিয়ার দুই হাত এবং একটি পায়ের রগ কেটে যায়। তার শরীরের একাধিক স্থানে গুরুতর আঘাত লাগে। প্রথমে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব
পরিবারের সদস্যদের বরাতে জানা যায়, ধন মিয়ার প্রথম স্ত্রীর ঘরে পাঁচ ছেলে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে দুই ছেলে রয়েছে। মোট সাতজন ছেলেকে আলাদা বাড়ি করে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে যেই বাড়িতে তিনি থাকেন, সেটির দখল নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন মাসুক মিয়া।
ধন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, “আমি সাতজন ছেলেকেই বাড়ি করে দিয়েছি। কারও প্রতি অবিচার করিনি। তবুও মাসুক আমার কাছে থাকা বাড়ি দখল করতে চাচ্ছিল। ইতোমধ্যেই বাড়ির অর্ধেক সে দখল করে নিয়েছে। সোমবার সকালেও এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর বিকেলে সুযোগ পেয়ে আমার ওপর হামলা চালায়।”
আশেপাশের লোকজনের বর্ণনা
ঘটনার সময় আশেপাশের কয়েকজন লোক ছুটে এসে তাকে রক্ষা করেন। স্থানীয়রা জানান, ধন মিয়াকে মাটিতে ফেলে দিয়েও মাসুক বারবার কোপাচ্ছিল। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় হামলাকারী।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “এতটা নির্মম হামলা আমরা জীবনে দেখিনি। নিজের বাবার ওপর এমন আচরণ কোনো সন্তানের কাছে প্রত্যাশিত নয়।”
গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ট্রমা সার্জন ডা. সোলায়মান মিয়া জানান, “ধন মিয়ার দুই হাত এবং একটি পায়ের রগ কেটে গেছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর ক্ষত রয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।”
অভিযুক্ত ছেলের অপরাধমূলক অতীত
এই ঘটনার পর মাসুক মিয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ছোট ভাই কাউছার মিয়া জানান, মাসুকের বিরুদ্ধে এর আগেও ডাকাতি, হত্যা চেষ্টা ও বিভিন্ন অপরাধের মামলা রয়েছে। আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য হওয়ায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ভয়ে সরে গেছেন।
কাউছার বলেন, “আমার ভাই মাসুক ভয়ঙ্কর স্বভাবের। তার কারণে আমাদের পরিবার বিপদের মধ্যে আছে। আমিও প্রাণভয়ে অন্যত্র বসবাস করি।”
পুলিশের বক্তব্য
নাসিরনগর থানার ওসি মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার খবর আমরা পেয়েছি। একটি পরিবারে এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক। তবে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এলাকায় ক্ষোভ ও আতঙ্ক
এই ঘটনার পর পুরো গ্রামে নিন্দার ঝড় উঠেছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ যদি আইনগতভাবে আগেই সমাধান করা হতো, তাহলে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়তো ঘটত না। অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এ ধরনের ঘটনা পরিবার ও সমাজে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
সমাজবিজ্ঞানীদের মত
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রামীণ এলাকায় পারিবারিক বিরোধ মীমাংসার সঠিক প্রক্রিয়া না থাকায় এ ধরনের সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ হলে স্থানীয় সালিশ বা আইনের শরণাপন্ন হওয়া উচিত, যাতে পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট না হয়।
সারসংক্ষেপ
এখনো পর্যন্ত হামলাকারী মাসুক মিয়া পলাতক। গুরুতর আহত ধন মিয়া ঢাকায় চিকিৎসাধীন। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিয়ে অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এ ধরনের ঘটনা কেবল পারিবারিক সম্পর্ককে নয়, সামাজিক নিরাপত্তাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এম আর এম – ০৫৮৪ , Signalbd.com