
কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় রবিবার দুপুরে বজ্রপাতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় ঘাটে নদী পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা এই তিন জন আকস্মিক বজ্রপাতে প্রাণ হারান। ঘটনাস্থলেই দুজন নারী এবং একজন যুবকের মৃত্যু হয়। পুলিশ তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।
ঘটনার বিস্তারিত
রোববার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে হোমনা উপজেলার ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের ভবানীপুর খেয়া ঘাটে এই দুর্ঘটনা ঘটে। হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, নিহতরা হলেন— নালা দক্ষিণ গ্রামের মমতাজ বেগম (৩৫), জাকিয়া (২৫) এবং দুলালপুর ইউনিয়নের রাশেদ মিয়া (২২)।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, দুপুর থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হলে উজানচর-ঘাগুটিয়া খেয়া পারাপারের জন্য কয়েকজন যাত্রী ঘাটে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতের আঘাতে ঘটনাস্থলেই তিন জনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
বাংলাদেশে বর্ষার সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যু হওয়া ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে নদী পারাপারের ঘাটগুলোতে বর্ষা ও বজ্রপাতের সময় যাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে। কুমিল্লার হোমনা উপজেলা একটি নদীমুখী এলাকা হওয়ায় এখানে প্রায়শই বর্ষার সময়ে খেয়া পারাপারের সময় মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হন।
পূর্বে এই ধরনের বজ্রপাতের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার চেষ্টা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন নিয়মিতভাবে সতর্কবার্তা জারি করে থাকেন, বিশেষ করে ভারি বৃষ্টি ও বজ্রপাতের পূর্বাভাসে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই দুর্ঘটনার প্রভাবে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নদী পারাপারের সময় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যাতায়াতের বিষয়ে সতর্কতা বৃদ্ধি পেতে পারে। স্থানীয়রা বলছেন, বর্ষার দিনে ঘাটগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে।
হোমনা থানার কর্মকর্তা আরও জানান, নিহতদের পরিবারের কাছে পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ হস্তান্তর করেছে। স্থানীয় প্রশাসন ঘটনার পরবর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
বাংলাদেশে প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নদী পারাপারের সময় এবং খোলা স্থানে থাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছরও হোমনা ও আশেপাশের অঞ্চলে বজ্রপাতে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এই ধরনের তথ্য স্থানীয় প্রশাসন ও আবহাওয়া অধিদফতরের জন্য সতর্কতা জারির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞ মতামত
অবসরপ্রাপ্ত আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ এ.কে.এম. শাহিন বলেন, “বর্ষাকালীন বজ্রপাত বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। নদীর ধারে বা খোলা ঘাটে থাকা মানুষের জন্য এটি মারাত্মক হতে পারে। জরুরি অবস্থায় দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।”
অর্থনীতিবিদ ও স্থানীয় গবেষক মনিরুল হক মন্তব্য করেন, “প্রশাসনের উচিত নদী পারাপারের সময় বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশনা জারি করা এবং সতর্কবার্তা প্রচার করা। এতে মানুষের জীবন রক্ষা সম্ভব। এছাড়া, খেয়া পারাপারের জন্য covered shelter স্থাপন করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।”
ভবিষ্যৎ সতর্কতা
স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ বলেছে, বর্ষার সময়ে নদী পারাপারের সময় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জন্য সতর্কতা জারি করা হবে। নাগরিকদেরও নির্দেশনা মানার আহ্বান জানানো হয়েছে, বিশেষ করে বজ্রপাত বা ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাসে ঘাটে অবস্থান এড়িয়ে চলার জন্য।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি স্থানীয়রা সতর্কতা অবলম্বন করেন এবং প্রশাসন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
এম আর এম – ১৬৩৭,Signalbd.com