বিশ্ব

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ১৪৬ বন্দি বিনিময় সম্পন্ন

Advertisement

রাশিয়া ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের মাঝেও এক মানবিক উদ্যোগ হিসেবে ১৪৬ জন করে বন্দি বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মধ্যস্থতায় রোববার এই বন্দি বিনিময় ঘটে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, এ বন্দি বিনিময়কে তারা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।

বন্দি বিনিময়ের আনুষ্ঠানিক বিবরণ

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে মোট ১৪৬ জন রুশ সেনাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর বিনিময়ে ইউক্রেনীয় সেনাদের একই সংখ্যক সদস্যকে কিয়েভে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত রুশ সেনাদের বর্তমানে বেলারুশে রাখা হয়েছে, যেখানে তারা চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা পাচ্ছেন।

অন্যদিকে, ইউক্রেনও জানিয়েছে, তাদের মুক্তিপ্রাপ্ত সেনারা দেশে ফিরে চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং পারিবারিক পুনর্মিলনের সুযোগ পাচ্ছেন।

কুরস্ক অঞ্চলের আট বাসিন্দা ফিরিয়ে আনা

বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে কুরস্ক সীমান্তবর্তী অঞ্চলের আটজন রুশ নাগরিককেও মস্কোতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা কিয়েভ কর্তৃপক্ষের হাতে আটক ছিলেন। মস্কো বলছে, এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে আলোচনার মাধ্যমে মানবিক সংকট সমাধানের সুযোগ এখনও রয়েছে।

ইউএই-এর ভূমিকা

এই বন্দি বিনিময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতা ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দীর্ঘদিন ধরে ইউএই যুদ্ধবিরোধী অবস্থান বজায় রেখেছে এবং মানবিক ইস্যুতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ ধরনের আরও উদ্যোগ সামনে আসতে পারে।

অতীতের বন্দি বিনিময় চুক্তি

এটি দুই দেশের মধ্যে প্রথম বন্দি বিনিময় নয়। এর আগে চলতি বছরের মে থেকে জুলাই পর্যন্ত একাধিক দফা আলোচনা হয়েছিল ইস্তাম্বুলে। সেসব আলোচনার ফলেই বিভিন্ন পর্যায়ে শত শত বন্দি নিজেদের দেশে ফেরার সুযোগ পেয়েছে।

তবে এবারের বিনিময় সংখ্যার দিক থেকে তুলনামূলক ছোট হলেও এর প্রতীকী গুরুত্ব অনেক। যুদ্ধ চলমান থাকলেও মানবিকতার ভিত্তিতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছে উভয় দেশ।

যুদ্ধক্ষেত্রের সাম্প্রতিক অবস্থা

বন্দি বিনিময়ের খবর প্রকাশের পরপরই রাশিয়া অভিযোগ করেছে যে ইউক্রেন একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় একটি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি চুল্লির উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। যদিও কিয়েভ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এই অভিযোগ-প্রত্যঅভিযোগের মাঝেই বন্দি বিনিময়ের ঘটনা সাময়িকভাবে হলেও আলোচনার ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক মহল বন্দি বিনিময়কে ইতিবাচকভাবে দেখছে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বন্দিদের মুক্তি শুধু মানবিক দিক থেকেই নয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবারগুলোর জন্যও আশার আলো। তারা মনে করছে, এর ফলে দুই দেশের মধ্যে আস্থা তৈরির পথ প্রশস্ত হতে পারে।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধের ময়দানে লড়াই চললেও এ ধরনের উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি তৈরি করতে পারে। যদিও বাস্তবে যুদ্ধবিরতি বা শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত, তবুও বন্দি বিনিময়কে একধরনের “সফট ডিপ্লোমেসি” হিসেবে দেখা হচ্ছে।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “বন্দি বিনিময় নিছক মানবিক কাজ নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের কূটনৈতিক আলোচনার জন্য একটি দরজা খুলে দেয়।”

পরিশেষে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো থামেনি, বরং প্রতিদিন নতুন করে হামলা ও পাল্টা হামলার খবর আসছে। তবুও ১৪৬ জন করে বন্দি মুক্তির এই ঘটনা মানবিকতার এক আলো দেখাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল আশা করছে, এ ধরনের পদক্ষেপই একদিন হয়তো শান্তি আলোচনার পথ প্রশস্ত করবে। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ভর করছে উভয় দেশের পরবর্তী অবস্থানের ওপর।

এম আর এম – ১০২৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button