
দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে হঠাৎ বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারি বৃষ্টির প্রভাবে পানি বৃদ্ধি
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে ৬ অক্টোবর সকাল ৯টার মধ্যে দেশের ভেতরে ও উজানে বিচ্ছিন্নভাবে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর সরাসরি প্রভাবে নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগ ছাড়াও উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। পঞ্চগড়ে ১১৮ মিলিমিটার, নীলফামারীর ডালিয়ায় ৮৫ মিলিমিটার, কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরীতে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। অপরদিকে ভারতের দার্জিলিংয়ে ২৬১, কোচবিহারে ১৯০, জলপাইগুড়িতে ১৭২, শিলিগুড়িতে ১৩৪, অরুণাচলের পাসিঘাটে ৮৯ এবং সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
নদী অববাহিকার বর্তমান অবস্থা
তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ ইতোমধ্যেই স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পানি বহন করছে। এই তিনটি নদীর পানি আরও বেড়ে গেলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নদী তীরবর্তী এলাকায় দ্রুত বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে চরাঞ্চল এবং নিম্নভূমি এলাকায় পানিবন্দি পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগের আশঙ্কা
এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, টানা বৃষ্টির কারণে গ্রামীণ সড়ক ও জমি ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ধান ও শাকসবজির ক্ষেত ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, বন্যা দেখা দিলে তাদের মৌসুমি ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। অনেকে আগাম আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পূর্বের অভিজ্ঞতা: হঠাৎ বন্যার ক্ষতি
বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলীয় নদ-নদীর আচরণ বরাবরই দ্রুত পরিবর্তনশীল। কয়েক ঘণ্টার ভারি বর্ষণেই নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যায়। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, এমন পরিস্থিতিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয় এবং পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসনকে তাই আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে।
প্রশাসনের সতর্কতা ও প্রস্তুতি
রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, তারা বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সেক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আকস্মিক বন্যার ঘটনা বেড়েছে। অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় নদীর পানি দ্রুত বেড়ে যায়। তারা বলেন, টেকসই বাঁধ নির্মাণ, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা জোরদার এবং জনগণের আগাম প্রস্তুতি ছাড়া এ ধরনের বন্যা মোকাবিলা কঠিন হয়ে উঠবে।
একজন জলবায়ু গবেষক বলেন, “প্রতিবারই আমরা দেখি বন্যার আগেই সংকেত দেওয়া হয়। কিন্তু যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে জনগণ দুর্ভোগে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব নয়।”
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
যদিও এটি মৌসুমি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তবুও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, আগাম সতর্কবার্তা প্রচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার না করলে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর উত্তরাঞ্চলে আরও একাধিকবার আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।
চার জেলায় বন্যার সম্ভাবনা ঘনিয়ে আসায় সাধারণ মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ ইতোমধ্যে ক্ষতির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। এখন দেখার বিষয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে এবং মানুষকে কতটা সহায়তা দিতে সক্ষম হয়।
এম আর এম – ১৬২৩,Signalbd.com