বিশ্ব

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনিকে হত্যার হুমকি ইসরায়েলের

Advertisement

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনীতি ফের একবার নতুন মোড় নিয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে প্রকাশ্যেই হত্যার হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি, ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে সামরিক হামলার সতর্কবার্তাও উচ্চারণ করেন তিনি।

ইসরায়েলের কঠোর হুমকি ও আঞ্চলিক উত্তেজনা

রোববার (২৭ জুলাই) রাতে দক্ষিণ ইসরায়েলের রামন বিমানঘাঁটিতে যান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। সেখানে তিনি বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে খামেনিকে জানাতে চাই, যদি তিনি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া চালিয়ে যান, তাহলে আমাদের দীর্ঘ হাত আবারও তেহরানে পৌঁছাবে। আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি নিয়ে, আর এবার ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিজেই লক্ষ্যবস্তু হবেন।”

এই কড়া ভাষায় প্রকাশিত বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ইসরায়েল ইরানের ওপর নতুন আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছে।

পূর্বের সংঘাত ও যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপট

এই হুমকির পেছনে আছে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান জটিল পরিস্থিতি। ২০২৫ সালের জুন মাসে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে দুই দেশের মধ্যে ১২ দিনের তীব্র সংঘাতের শুরু হয়।

পাল্টা জবাবে তেহরান ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রও এই সংঘাতে অংশ নিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা করে।

শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২৪ জুন এক যুদ্ধবিরতি হয়। কিন্তু নতুন হুমকির মাধ্যমে ফের যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ করণীয়

বর্তমানে ইসরায়েলের হুমকির ব্যাপারে ইরানের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নতুন কোনো সামরিক সংঘাতের পূর্বাভাস।

বিশ্বের বৃহত্তর শক্তিগুলোর, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার ভূমিকা এ সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেলে হয়তো উত্তেজনা কমানো সম্ভব হতে পারে।

ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কের জটিলতা

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিদ্যমান। ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর কাড়েছে, আর ইসরায়েল সেই পারমাণবিক ক্ষমতাকে নিজ নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে।

ইরানের বিরুদ্ধে পশ্চিমা ও ইসরায়েলের নানা নিষেধাজ্ঞা, ও পারস্পরিক সামরিক সংঘর্ষ এই উত্তেজনার পেছনের কারণ।

সম্প্রতি ইরানের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ

কয়েকদিন আগেই ইরান রাশিয়ার সহযোগিতায় নিজেদের স্যাটেলাইট ‘নাহিদ-২’ উৎক্ষেপণ করেছে। এর মাধ্যমে ইরানের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এটি মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যের ওপর নতুন প্রভাব ফেলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

যুক্তরাষ্ট্র এখনও মধ্যপ্রাচ্যের সংকট মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তবে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে নতুন সংঘাত শুরু হলে, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল ও পদক্ষেপ কেমন হবে, তা বিশ্বের নজর এখন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে থাকলেও সরাসরি বড় কোনো সামরিক সংঘাতে জড়াতে চাইবে না। তারা কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবে।

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি

মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকটের মূলে রয়েছে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা। ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গি দুটির মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা উত্তেজনার মূল কারণ।

বিশ্বের বৃহত্তর শক্তিগুলো যদি সংলাপের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করে, তবে এই সংকটের সমাধান সম্ভব হতে পারে। অন্যথায়, নতুন সংঘাত ও দুর্ভোগ অনিবার্য।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক চাপ

ইসরায়েলের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। তারা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে, কিন্তু একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ও সমালোচনার মুখে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ ও পারস্পরিক সম্মান অপরিহার্য।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনিকে হত্যার হুমকি ও ইরানের বিরুদ্ধে নতুন হামলার সতর্কতা মধ্যপ্রাচ্যের নতুন উত্তেজনার সংকেত দিচ্ছে। গত বছরের সংঘাতের প্রেক্ষাপটে নতুন এই হুমকি বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই সংকট আরও গভীর হতে পারে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button