বিশ্ব

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়ালো

Advertisement

 ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছেন অন্তত ২৬৫ জন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করেই ইসরায়েলি সেনারা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ হতাহতের তথ্য

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, নতুন করে নিহত হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৭ হাজার ৭৪ জনে। এছাড়া এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৬৯ হাজারেরও বেশি মানুষ।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সংখ্যাটি কেবল সরকারি রেকর্ড। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজারো মরদেহ চাপা পড়ে রয়েছে। ফলে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি হামলার নতুন ধাপ

শনিবার ভোর থেকে মধ্য গাজার নুসেইরাত, খান ইউনুস ও গাজা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালায় ইসরায়েলি বিমান। একইসঙ্গে আর্টিলারি হামলাও হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে সাধারণ মানুষকে ফেরত না আসার সতর্কবার্তা দিয়েছে এবং ওই এলাকাকে ‘বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র’ বলে ঘোষণা করেছে।

এক মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “গাজার উত্তরের যেকোনো অবস্থান ঝুঁকিপূর্ণ। যারা বেঁচে থাকতে চান তাদের দক্ষিণে সরে যেতে হবে।” তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসব সতর্কবার্তা দিয়ে ইসরায়েল আসলে গাজার পুরো অঞ্চলকে অমানবিক চাপের মধ্যে ফেলছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ২০ দফা পরিকল্পনা দিয়েছেন। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তা উপেক্ষা করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবও গাজায় মানবিক বিপর্যয় রোধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরব লীগও একই দাবি জানিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলি সরকারের অবস্থান এখনও অপরিবর্তিত।

গাজার মানবিক সংকট

অবিরাম বোমাবর্ষণে গাজা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অধিকাংশ হাসপাতাল কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ওষুধ, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে হাজারো আহত মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ত্রাণ প্রবেশেও নানা বাধা তৈরি করছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাজায় বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। খাদ্য ও পানির ঘাটতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

নিহতদের মধ্যে কারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ স্কুলে বা আশ্রয়কেন্দ্রে নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি একটি “প্রজন্ম ধ্বংসের কৌশল” যেখানে ইসরায়েল নিরীহ মানুষকে টার্গেট করছে।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজায় দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত শুধু ফিলিস্তিন নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছেন, নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বৃদ্ধি পাবে, যা ইসরায়েলের কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে।

একজন মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, “গাজার এই মানবিক বিপর্যয় যদি বন্ধ না হয়, তবে ভবিষ্যতে এটি ইসরায়েলের জন্য আরও বড় রাজনৈতিক ও কৌশলগত সংকট তৈরি করবে।”

গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ৬৭ হাজার ছাড়ানো এই মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ দেখা দিলেও, সংঘাত থামছে না। প্রশ্ন এখন একটাই — মানবিক বিপর্যয় রোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে কবে?

এম আর এম – ১৬০৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button