অর্থনীতি

বাংলাদেশ–থাইল্যান্ড অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

Advertisement

বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে শক্তিশালী করতে আগামী দিনে যৌথ উদ্যোগ আরও ব্যাপক হবে। রাজধানীর গুলশানে অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ব্যবসায়ী ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এফবিসিসিআই (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) ও থাই-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের যৌথ আয়োজন করা এই সভায় মূল আলোচনা ছিল কিভাবে দুই দেশের মধ্যকার বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়ানো যায়।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও এশিয়ান প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাজার সম্প্রসারণ

সভায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা বলেন, থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও এশিয়ান প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। অন্যদিকে, বাংলাদেশ তার তরুণ ও দক্ষ জনশক্তির কারণে এ অঞ্চলে ব্যবসার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, দুই দেশের ব্যবসায়ীরা একযোগে কাজ করে বৃহত্তর বাজারে প্রবেশের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ

দুই দেশের মধ্যে আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) বাস্তবায়নের গুরুত্ব সভায় বিশেষভাবে আলোচিত হয়। FTA বাস্তবায়িত হলে পণ্য ও সেবার বিনিময় সহজতর হবে, কর ও শুল্কের বাধা কমবে, এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা ও সুযোগ তৈরি হবে। এর ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায় শুরু হবে।

বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র

এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান সভায় বলেন, “বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিনিয়োগের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ, অবকাঠামো, জ্বালানি এবং হালকা প্রকৌশল খাতে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। এই খাতে যৌথ বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিনিময় করলে উভয় দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।”

উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকদের দৃষ্টিভঙ্গি

থাই-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি শামস মাহমুদ ও রয়েল থাই এম্বাসির চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স পানম থংপ্রায়ুন উভয় পক্ষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব জোর দিয়ে বলেন, “ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার মাধ্যমে, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো সম্ভব।”

বাংলাদেশের তরুণ শ্রমশক্তি এবং থাইল্যান্ডের বাজার দক্ষতা

বাংলাদেশের তরুণ ও কর্মদক্ষ জনশক্তি আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। থাইল্যান্ডের আধুনিক প্রযুক্তি ও বাণিজ্যিক দক্ষতার সঙ্গে এই জনশক্তির সমন্বয় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে কাজ করে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বৃহত্তর বাজারে প্রবেশের জন্য নতুন পথ খুলতে পারেন।

আগামী দিনে কিভাবে এগোবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড বাণিজ্য?

এফবিসিসিআই এবং থাই-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল যৌথ উদ্যোগে পরিকল্পনা করছে ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগ সহজতর ও সুরক্ষিত করার। এর মধ্যে থাকবে:

  • বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন
  • প্রযুক্তি স্থানান্তর বৃদ্ধি
  • যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মসূচি
  • ব্যবসায়িক তথ্য বিনিময় ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা
  • আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা

বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির জটিলতা ও চ্যালেঞ্জের মাঝেও বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যকার অর্থনৈতিক বন্ধন মজবুত হচ্ছে। উভয় দেশই চাইছেন যে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করা হোক। এমন পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, সাধারণ জনগণের জীবনমানও উন্নত হবে।

সংক্ষেপে:

  • বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড যৌথভাবে দক্ষিণ-পূর্ব ও এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যবসার সুযোগ বাড়াতে চায়।
  • আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহজ হবে।
  • প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ, অবকাঠামো, জ্বালানি ও হালকা প্রকৌশল খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বড়।
  • বাংলাদেশের তরুণ দক্ষ শ্রমশক্তি ও থাইল্যান্ডের আধুনিক বাণিজ্যিক অভিজ্ঞতা দুই দেশের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি বৃদ্ধি করবে।
  • আগামী দিনে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিনিময়ে নতুন দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে এই অর্থনৈতিক সহযোগিতা শুধু দুই দেশের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রকেই প্রসারিত করবে না, এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতির জন্যও নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button