বিশ্ব

পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরে তীব্র বিক্ষোভ: নিহত ১, আহত ১২

Advertisement

পাকিস্তানের দখলকৃত আজাদ কাশ্মিরে গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া তীব্র বিক্ষোভে অন্তত একজন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্যও রয়েছে। এই বিক্ষোভের মূল কারণ হলো খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং পার্লামেন্টে আজাদ কাশ্মিরের আসনসংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে জনগণের অসন্তোষ।

আজাদ কাশ্মিরে বিক্ষোভের সূত্রপাত

পাকিস্তানি কাশ্মিরভিত্তিক রাজনৈতিক দল জম্মু কাশ্মির জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি (জেএজেএসি) সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) থেকে আজাদ কাশ্মিরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে হরতাল কর্মসূচি শুরু করে। এই কর্মসূচি কয়েক দিনের মধ্যে হাজার হাজার মানুষকে আকৃষ্ট করে।

এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাধারণ মানুষ মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্বের কারণে ক্রমবর্ধমান হতাশায় আছেন। খাদ্যদ্রব্যের দাম প্রতিদিন বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কষ্টকর করে তুলেছে। কর্মসংস্থান না থাকার ফলে যুবসমাজও ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করছে।

শান্তি মিছিল ও সংঘর্ষ

একই দিনে, সরকারপন্থি রাজনৈতিক গোষ্ঠী মুসলিম কনফারেন্স শান্তি মিছিল বের করে। কিন্তু মুজাফফরাবাদের নীলম ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী গুলাম মুস্তফা জানান, “নীলম ব্রিজের আশেপাশে অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে শান্তি মিছিল থেকে গুলি ছোড়া শুরু হয়। এতে গুরুতর আহত হয়েন মোহাম্মদ সুধির (৩০), যিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তিনি একজন ক্রোকারি ব্যবসায়ী ছিলেন।”

ঘটনার পর জেএজেএসি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র দাঙ্গা শুরু হয়।

পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর প্রতিক্রিয়া

সংঘর্ষ শুরু হতেই পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে। তারা টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ এবং ফাঁকা গুলি ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। এই ব্যবস্থার ফলে অন্তত ১২ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছে।

আজাদ কাশ্মিরের সেন্ট্রাল মিলিটারি হাসপাতাল (CMH)-এ আহতদের চিকিৎসা চলছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে কিছুজনের অবস্থা গুরুতর হলেও বর্তমানে সকলের জীবন হুমকির বাইরে রয়েছে।

বিক্ষোভের প্রেক্ষাপট

আজাদ কাশ্মিরে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। খাদ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, শিক্ষিত যুবসমাজের মধ্যে বেকারত্বের হার ক্রমবর্ধমান, যা বিক্ষোভের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

পাকিস্তান সরকারও আজাদ কাশ্মিরের রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য তৎপর নয়। পার্লামেন্টে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারার কারণে সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আজাদ কাশ্মিরে এই ধরনের বিক্ষোভ পাকিস্তানের জন্য রাজনৈতিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘাত দমনে ব্যর্থ হলে, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা বলছেন, আজাদ কাশ্মিরে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবহেলা জনসমাজকে দমনমূলক প্রক্রিয়ার প্রতি অসন্তোষী করেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকায় জনগণের সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি সময়মতো সমাধান না করা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের আন্দোলন এবং সহিংসতার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া

মুজাফফরাবাদের স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি এবং বেকারত্বের সমস্যায় ভুগছি। সরকার আমাদের কথা শোনে না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু দাঙ্গায় রূপ নেয়।”

বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ শ্রমজীবী মানুষও অংশ নেয়। তারা মূলত নিজেদের অধিকার, সুষ্ঠু জীবনের চাহিদা এবং নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আন্দোলন করছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি পাকিস্তান সরকার আজাদ কাশ্মিরের সমস্যাগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, তবে বিক্ষোভগুলো ক্রমশ তীব্র আকার নেবে। বিশেষ করে যুবসমাজের অংশগ্রহণ বিক্ষোভের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।

পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা কিছুটা শান্তি ফেরাতে সক্ষম হলেও, জনগণের দীর্ঘমেয়াদী অসন্তোষ দূর করতে সরকারকে কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে।

আজাদ কাশ্মিরে চলমান বিক্ষোভ প্রমাণ করছে যে, সাধারণ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার এবং নিরাপদ জীবনযাত্রার জন্য সচেতন ও সচেতন। খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সীমিত থাকায় এই ধরনের আন্দোলন প্রকৃত অর্থে সমাজ ও সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা এবং প্রত্যাশার প্রতিফলন।

পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরের পরিস্থিতি আগামী দিনে কিভাবে মোকাবেলা করা হবে তা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নজরদারিতে রয়েছে। বর্তমান দাঙ্গা এবং বিক্ষোভের প্রেক্ষাপট থেকে এটি স্পষ্ট যে, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আজাদ কাশ্মিরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে না।

MAH – 13106 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button