আঞ্চলিক

রূপপুরের জ্বালানি পৌঁছেছে দেশে, চালু কবে জানালেন অর্থ উপদেষ্টা

Advertisement

বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুরের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি দেশে এসে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আগামী ডিসেম্বরেই কেন্দ্রটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

কখন চালু হচ্ছে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র

উপদেষ্টা বলেন,

 “আমরা নভেম্বরে চালু করার জন্য রাশিয়াকে অনুরোধ করেছিলাম। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বরেই (পরীক্ষামূলকভাবে) এটি চালু করা হবে।”

তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) একটি বিশেষজ্ঞ টিম ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে কিছু সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশ সরকার সেই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের কাজ করছে। টিমটি পুনরায় এসে মূল্যায়ন শেষে চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে।

রূপপুর প্রকল্প

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে এবং ধাপে ধাপে এখানে দুটি রাশিয়ান নির্মিত ভিভিইআর-১২০০ রিঅ্যাক্টর স্থাপন করা হয়েছে।

প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে এই কেন্দ্র থেকে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে।

বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ এখনো হয়নি

ড. সালেহউদ্দিন জানান, রূপপুর প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে তিনি আশাবাদী, উৎপাদন শুরুর আগে দাম নির্ধারণে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।

আর্থিক কাঠামো ও ঋণ চুক্তি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ অর্থায়ন করছে রাশিয়া ঋণের মাধ্যমে, যা প্রায় ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। বাকি ১০ শতাংশ বহন করছে বাংলাদেশ সরকার।

মূলত ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই ঋণ বিতরণের কথা ছিল। তবে বাংলাদেশের অনুরোধে ঋণ ছাড়ের মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশকে মূল ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে।

প্রকল্প ঘিরে প্রত্যাশা

বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের মতে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন যুগের সূচনা হবে। বর্তমানে দেশে গ্যাস, কয়লা ও তেল নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওপর বড় ধরনের চাপ রয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ সংযুক্ত হলে জ্বালানি বৈচিত্র্য আসবে এবং দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

জনসাধারণের অন্যতম উদ্বেগের জায়গা হলো নিরাপত্তা। সরকার জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রিঅ্যাক্টরের নিরাপত্তা, জ্বালানি পরিবহন ও সংরক্ষণসহ প্রতিটি ধাপে কঠোর নজরদারি থাকবে।

সম্ভাব্য প্রভাব

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি কমবে এবং শিল্প ও কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়বে। পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ, বিদ্যুতের দাম এবং পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় অর্জন হলেও দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক টেকসইতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ঋণ পরিশোধের চাপ যেন অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, সে বিষয়টি নজরে রাখতে হবে।

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু একটি প্রকল্প নয়; এটি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা। ডিসেম্বরের পরীক্ষামূলক চালুর পর সবকিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে আগামী বছর থেকেই দেশবাসী পারমাণবিক বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকল্পের সফলতা নির্ভর করবে নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার ওপর।

এম আর এম – ১৫৯০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button