বিশ্ব

ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না পাঠানোর পক্ষে ৫১% মার্কিন ভোটার

Advertisement

নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং সিয়েনা রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সম্প্রতি পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের একটি বড় অংশ ইসরায়েলকে অতিরিক্ত সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছেন। জরিপ অনুযায়ী, ৫১ শতাংশ মার্কিন ভোটার ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা পাঠানোর বিরুদ্ধে।

এই জরিপ মার্কিন নাগরিকদের বর্তমান ভাবমূর্তি এবং আন্তর্জাতিক নীতি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়।

ভোটারদের মতামত: সমর্থন বনাম বিরোধিতা

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ উত্তরদাতা ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ‘জোরালোভাবে বিরোধিতা’ করেছেন। অন্যদিকে, মাত্র ১৯ শতাংশ উত্তরদাতা এটি ‘জোরালোভাবে সমর্থন’ করেন।

বাকি ভোটাররা বা অংশগ্রহণকারীরা আংশিক সমর্থন বা নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন। এটি মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের বিষয়ে গভীর বিভাজন এবং তীব্র বিতর্ককে প্রতিফলিত করে।

ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ডে নাগরিকদের উদ্বেগ

জরিপের আরেকটি চমকপ্রদ ফলাফল হলো, প্রায় ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন যে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে। এছাড়া, ৬২ শতাংশের মতে, ইসরায়েল বেসামরিক হতাহতের ঝুঁকি কমাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মতামত যুদ্ধ ও সহিংসতার মানবিক প্রভাবের প্রতি মার্কিন জনগণের সচেতনতার পরিচায়ক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাজা ও পশ্চিম তীর অঞ্চলে সংঘটিত সহিংসতা এবং বেসামরিক প্রাণহানির খবর মার্কিন মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে, যা জনগণের মনোভাবকে প্রভাবিত করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান

এর মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ এবং বিতর্কিত সামরিক সহায়তা তহবিলে অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি তারা ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি অস্ত্র বিক্রির অনুমোদনের আবেদন করেছে। এই অনুমোদনের মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যাপাচি হেলিকপ্টার
  • হাজার হাজার আর্টিলারি সিস্টেম
  • সাঁজোয়া যান এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ কংগ্রেসের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ডেমোক্র্যাটদের একাংশ মনে করছেন, এই ধরনের সাহায্য পশ্চিম তীর এবং গাজা অঞ্চলে সহিংসতা বাড়াতে পারে এবং মার্কিন জনগণের বিপর্যয়জনক অনুভূতি আরও তীব্র করবে।

মার্কিন নাগরিকদের বিভাজন

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ভোটারদের মনোভাব রাজনৈতিক পার্টি ভিত্তিক ভিন্নতা দেখাচ্ছে। রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন করার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি, তবে ডেমোক্র্যাট ভোটারদের মধ্যে বিরোধিতা অনেক বেশি। বিশেষ করে যুবসমাজ এবং নগর এলাকায় বসবাসরত নাগরিকরা সামরিক সহায়তার বিরোধী।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি মার্কিন কংগ্রেস এবং প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণে জনমতের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইতিহাস এবং পেছনের প্রেক্ষাপট

মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্ক দীর্ঘ ইতিহাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে দৃঢ়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে। এই সম্পর্কের পেছনে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও মার্কিন কৌশলগত স্বার্থ।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাজা, পশ্চিম তীর এবং লেবাননের সীমান্তে সংঘটিত সংঘাত জনমত এবং রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে। বেসামরিক নিহতের সংখ্যা এবং মানবিক সংকট মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত আলোচিত হওয়ায় মার্কিন নাগরিকরা এই ধরনের সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে শঙ্কিত।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলকে সাহায্য না পাঠানোর পক্ষে জনমতের বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলো এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ মার্কিন পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছে, তবে অন্যরা মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা সংঘাত দীর্ঘায়িত করতে পারে।

অর্থনৈতিক প্রভাব

৬ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রয় অনুমোদন এবং সামরিক সহায়তা শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য এটি বিশাল বাজার। অ্যাপাচি হেলিকপ্টার, আর্টিলারি সিস্টেম, সাঁজোয়া যান—all এগুলো উৎপাদন ও রফতানিতে মার্কিন অর্থনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

তবে নাগরিকরা অর্থনৈতিক স্বার্থের চেয়ে মানবিক দিক বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। জরিপে দেখা গেছে, অর্থনৈতিক যুক্তি সামরিক সহায়তার সমর্থন কমাতে পারছে না।

ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রশাসন এবং কংগ্রেসকে জনমতকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আগামী নির্বাচনে এবং নীতি নির্ধারণে এই ধরনের জনমতের প্রভাব স্পষ্ট দেখা যাবে।

ইসরায়েলের জন্য সামরিক সহায়তা দেওয়া না দেওয়া শুধুমাত্র দুই দেশের সম্পর্ক নয়, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নীতি, মানবিক নীতি এবং কৌশলগত স্বার্থের মধ্যে একটি সংবেদনশীল সমন্বয়।

সংক্ষেপে:

  • ৫১% মার্কিন ভোটার ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দেওয়ার পক্ষে।
  • ৩৫% ‘জোরালো বিরোধিতা’, ১৯% ‘জোরালো সমর্থন’।
  • ৪০% ভোটার মনে করছেন ইসরায়েল বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে।
  • ট্রাম্প প্রশাসন ৬ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্যের অনুমোদন চাইছে।
  • রাজনৈতিক, মানবিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি একটি বিতর্কিত বিষয়।

এই জরিপ মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্কের ভবিষ্যত, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এবং আন্তর্জাতিক নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

MAH – 13084 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button