
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রেলভবনে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। বৈঠকে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন এবং সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রাজধানীর রেলভবনে এই বৈঠক শুরু হয়। এতে শিক্ষার্থীদের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। বৈঠকে মূল আলোচনায় উঠে আসে প্রকৌশলীদের পেশাগত অধিকার, যৌক্তিক দাবিগুলো, এবং সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ।
বৈঠকে কারা উপস্থিত ছিলেন
বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা—মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান এবং সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান—শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ১১ জন প্রতিনিধি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে উভয়পক্ষ পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনায় বসলেও, শিক্ষার্থীরা তাদের পাঁচ দফা দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি
বৈঠকের শুরু থেকেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের পাঁচ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে আলোচনা চালান। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
- সরকার ঘোষিত আট সদস্যের কমিটি সংস্কার করে সেখানে শিক্ষক প্রতিনিধি ও প্রকৌশলীদের অন্তর্ভুক্ত করা।
- উপদেষ্টাদের উপস্থিতিতেই নির্বাহী আদেশে তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা প্রদান।
- আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারের নেওয়া এবং আন্দোলনকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- হামলাকারী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা ও চাকরি থেকে বহিষ্কার করা।
সরকারের আগের সিদ্ধান্ত ও শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এর আগে দুপুরে সরকার বিএসসি ডিগ্রিধারীদের দাবির যৌক্তিকতা যাচাই ও সুপারিশ প্রণয়নের জন্য আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের দাবি—এই কমিটিতে প্রকৌশল পেশাজীবীদের প্রকৃত প্রতিনিধি ও শিক্ষকরা নেই। ফলে কমিটির সুপারিশ নিরপেক্ষ হবে না।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, প্রকৌশলীদের অধিকার আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হলে নতুন করে কমিটি গঠন করতে হবে।
শাহবাগে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি
বৈঠকের সময় শাহবাগে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা ঘোষণা দেন, তাদের দাবির ইতিবাচক ফলাফল না আসা পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বেন না। শিক্ষার্থীদের মতে, আন্দোলন শুধু তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম নয়, বরং দেশের প্রকৌশল খাতকে এগিয়ে নেওয়ার একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপট
আন্দোলনের মধ্যে সম্প্রতি কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থী রোকন গুরুতর আহত হন। এই ঘটনার পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়। শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছেন, হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ডিসি মাসুদকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়।
উপদেষ্টাদের প্রতিশ্রুতি
বৈঠকে উপস্থিত উপদেষ্টারা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মনোযোগ সহকারে শোনেন। তারা আশ্বাস দেন, যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তবে শিক্ষার্থীরা লিখিত নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কোন দিকে
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখনো থামেনি। বৈঠক চলমান থাকলেও তারা শাহবাগে অবস্থান ধরে রেখেছেন। আলোচনার ফলাফল ইতিবাচক হলে পরিস্থিতি শান্ত হতে পারে, তবে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করার চেষ্টা চলছে।
সমাপ্তি
প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারের তিন উপদেষ্টার বৈঠক দেশের শিক্ষা ও প্রকৌশল খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হলে এটি দীর্ঘদিনের একটি জটিল সমস্যার সমাধান হতে পারে। তবে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে—আলোচনার পর বাস্তবে কত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং শিক্ষার্থীরা কবে আন্দোলন থেকে সরে আসবেন।
এম আর এম – ১০৬১, Signalbd.com