পলোডাঙ্গা গ্রামের পলো বানানো
পলোডাঙ্গা গ্রামের পলো বানানো, ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের বোকাইল গ্রামটি পলো তৈরির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই গ্রামে পলো তৈরি হচ্ছে, যা স্থানীয়ভাবে ‘পলোডাঙ্গা’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারই পলো তৈরির সঙ্গে জড়িত, এবং এটি তাদের প্রধান জীবিকা।
পলো কী?
পলো হলো বাঁশ দিয়ে তৈরি একটি ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার ফাঁদ, যা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। এটি দেখতে অনেকটা উল্টানো খাঁচার মতো, যার নিচের অংশ খোলা থাকে। জলাশয়ে পলো ডুবিয়ে রেখে মাছ ধরা হয়।
পলো তৈরির প্রক্রিয়া
পলো তৈরির জন্য প্রথমে মজবুত বাঁশ সংগ্রহ করা হয়। বাঁশকে সঠিক মাপে কেটে শলা তৈরি করা হয়। এরপর এই শলাগুলোকে নির্দিষ্ট নকশা অনুযায়ী বুনন করা হয়, যা একটি পলো তৈরি করে। প্রতিটি পরিবারের তিন থেকে চারজন সদস্য মিলে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি পলো তৈরি করতে পারেন। গ্রামের নারীরাও গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি পলো তৈরিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
বাজারজাতকরণ ও আয়ের উৎস
প্রতিটি পলো আকার ও মান অনুযায়ী ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। পাইকারি ক্রেতাদের জন্য এই দাম কিছুটা কম হয়। বাঁশের মূল্য ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, যা থেকে তিন থেকে চারটি পলো তৈরি করা যায়। স্থানীয় হাটবাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে পলো সংগ্রহ করেন।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
পলোডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দারা তাদের এই ঐতিহ্যবাহী পেশা ধরে রেখেছেন। তবে তারা সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত। সুদমুক্ত ঋণ বা আর্থিক সহায়তা পেলে তারা আরও বেশি পলো তৈরি করে জীবিকা উন্নত করতে পারতেন। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মোল্লা বলেন, “আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে পলো তৈরি করছি। সরকারি সহায়তা পেলে আমাদের জন্য ভালো হতো।”
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
পলোডাঙ্গা গ্রামের পলো তৈরির ঐতিহ্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি তাদের সংস্কৃতির অংশও বটে। প্রতি বছর বর্ষার শেষে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবও অনুষ্ঠিত হয়, যা স্থানীয়দের মধ্যে আনন্দ ও উৎসাহ যোগায়।
পলোডাঙ্গা গ্রামের পলো তৈরির ঐতিহ্য বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি ও অর্থনীতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পেলে এই পেশা আরও সমৃদ্ধ হতে পারে, যা স্থানীয়দের জীবিকা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।