রাজনীতি

শিশুদের জন্য বিভিন্ন মসজিদে চকলেটের ব্যবস্থা করল ছাত্রদল

Advertisement

রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে শিশুদের নামাজে আগ্রহী করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ছাত্রদল। সংগঠনের তরুণ নেতাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নামাজ শেষে কোমলমতি শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে চকলেট। এতে একদিকে শিশুদের মাঝে ধর্মীয় আগ্রহ বাড়ছে, অন্যদিকে মসজিদকেন্দ্রিক সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় হচ্ছে।

ছাত্রদলের উদ্যোগের বিস্তারিত

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বেশ কয়েকটি মসজিদে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। জানা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ছাত্রদলের (কেন্দ্রীয় কমিটি) সহ দপ্তর সম্পাদক এবং ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এ তাইফুল হকের নেতৃত্বে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল নেতা মোবাশ্বির ইবনে বারীসহ স্থানীয় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। নামাজ শেষে ছোটদের হাতে প্যাকেটভর্তি চকলেট তুলে দেন তারা।

কেন নেওয়া হলো এই উদ্যোগ

ছাত্রদলের নেতারা জানান, বর্তমান প্রজন্মকে ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করা সময়ের দাবি। প্রযুক্তিনির্ভর প্রজন্মকে মসজিদমুখী করতে উৎসাহমূলক কিছু প্রয়োজন। সেই ভাবনা থেকেই শিশুদের জন্য এ ধরনের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তাদের মতে, শিশুদের জন্য ছোট্ট একটি চকলেট আনন্দের কারণ হলেও এর ভেতরে লুকিয়ে আছে বড় শিক্ষা—মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠন শিশুদের ধর্মীয় চর্চায় উৎসাহ দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কোরআন শরিফ বিতরণ, ইসলামী বই প্রদান কিংবা ইফতার আয়োজনের মতো কার্যক্রম অনেকবার দেখা গেছে। তবে শিশুদের জন্য চকলেট বিতরণের এই কার্যক্রমকে অনেকেই অভিনব ও সৃজনশীল বলে মনে করছেন।

রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রদল এর আগে সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো, রক্তদান কর্মসূচি কিংবা বন্যার্তদের সহযোগিতার মতো উদ্যোগ তাদের ইতিহাসে রয়েছে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ছাত্রদলের এই চকলেট বিতরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। অনেকেই ফেসবুক ও এক্স-এ পোস্ট দিয়ে এই কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন। তাদের ভাষ্য, ছাত্র সংগঠনগুলো শুধু রাজনীতি নয়, সামাজিক দায়িত্বেও এগিয়ে এলে সমাজ উপকৃত হবে।

ঢাকার এক অভিভাবক বলেন, “শিশুরা যখন নামাজ শেষে চকলেট পায়, তখন তারা খুশি হয়। খুশি হওয়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ।”

ছাত্রদল নেতাদের মতামত

এ বিষয়ে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির জানান, “আমাদের ইউনিটের তরুণ নেতারা শিশুদের ইসলামী মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, শিশুদের ধর্মীয় চর্চায় আগ্রহী করে তোলা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্রদল সবসময় সামাজিক দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে কাজ করে। আগামীতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”

ধর্মীয় মূল্যবোধ গঠনে প্রভাব

বিশেষজ্ঞদের মতে, শৈশবেই যদি শিশুদের ধর্মীয় অনুশাসনে আগ্রহী করা যায়, তবে তা আজীবন তাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ছোটখাটো উৎসাহমূলক উদ্যোগ শিশুদের মানসিক বিকাশেও ভূমিকা রাখে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, “শিশুরা যখন ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে আনন্দ খুঁজে পায়, তখন তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে। ছাত্রদলের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে তরুণদের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা ছড়াবে।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আয়োজকদের দাবি, এটি ছিল কেবল শুরু। তারা চান ভবিষ্যতে রাজধানীর বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মসজিদেও এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে। পাশাপাশি তারা শিশুদের জন্য ইসলামিক কুইজ, হাদিস পাঠ প্রতিযোগিতা ও ইসলামী গল্প বলার অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনাও করছেন।

তাদের বিশ্বাস, এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধে আরও দৃঢ়ভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

ছাত্রদলের এই চকলেট বিতরণ কার্যক্রম একদিকে যেমন শিশুদের নামাজের প্রতি উৎসাহ জাগাচ্ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে। অনেকের প্রত্যাশা, ছাত্র সংগঠনগুলো ভবিষ্যতেও এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগে এগিয়ে আসবে।

তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—এই কার্যক্রম কি শুধু একটি ক্ষণস্থায়ী আয়োজনেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগে রূপ নেবে? সময়ই সেই উত্তর দেবে।

এম আর এম – ১৫৬৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button