স্বাস্থ্য

খাদ্যে ভেজাল: তিন প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

Advertisement

মানহীন ও ভেজাল খাদ্য উৎপাদনের অভিযোগে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকার বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত। আদালতের নির্দেশে যেসব পণ্যে ভেজাল ধরা পড়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় কিছু ব্র্যান্ডের ড্রিঙ্ক, ওয়েফার রোল এবং সস। এ ঘটনায় ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে এবং খাদ্যে ভেজাল নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও পণ্য

আদালতের নথি অনুযায়ী, ল্যাব পরীক্ষায় যেসব পণ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে সেগুলো হলো:

  • ইস্পাহানি ফুড লিমিটেডের ‘ইস্পি ম্যাংগো ইনস্ট্যান্ট পাউডার ড্রিঙ্ক’
  • কোকোলা ফুড প্রোডাক্টসের ‘চকলেট কোকোলা দি রিয়েল ওয়েফার রোল (শিশু খাদ্য)’
  • আপন গুড ফুড লিমিটেডের ‘আপন টমেটো সস’

এসব পণ্যে মান নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও ভেজাল প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে আদালত মামলাগুলো আমলে নিয়ে তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।

খাদ্যে ভেজালের পুরনো প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল কোনো নতুন সমস্যা নয়। বিভিন্ন সময়েই দুধ, মিষ্টি, তেল, মশলা, পানীয় এবং এমনকি শিশু খাদ্যেও ভেজালের অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর শত শত প্রতিষ্ঠান ভেজাল খাদ্য উৎপাদনের দায়ে জরিমানা গুনছে। তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনা তুলনামূলকভাবে বিরল। এতে বোঝা যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষ এখন আরও কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে।

ভোক্তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি

খাদ্যে ভেজাল শুধু মানহীনতা নয়, বরং সরাসরি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজালযুক্ত খাবার দীর্ঘদিন খেলে যকৃতের সমস্যা, কিডনি বিকল, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার এমনকি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।
শিশুদের জন্য তৈরি খাদ্যে ভেজাল ধরা পড়ায় অভিভাবকদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। অনেক অভিভাবক এখন ভাবছেন, বাজারের কোন খাবার আসলে নিরাপদ।

আইনি ব্যবস্থা ও শাস্তি

দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, খাদ্যে ভেজাল প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া ভেজাল খাদ্য বাজেয়াপ্ত, প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল এবং ব্যবসা বন্ধ করার মতো পদক্ষেপও নেওয়া যেতে পারে। আদালতের এ সিদ্ধান্তকে অনেকেই একটি নজিরবিহীন পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, যা ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।

বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা সংগঠনের মতামত

ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, শুধু আদালতের সিদ্ধান্ত নয়, নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও কার্যকরী পদক্ষেপ জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কড়া নজরদারি নিশ্চিত করা না গেলে ভেজাল রোধ সম্ভব নয়।
একজন পুষ্টিবিদ জানান, “শিশু খাদ্যে ভেজাল ধরা পড়া খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকিই তৈরি করে না, বরং ভোক্তার আস্থাকেও ধ্বংস করে।”

ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া

আদালতের এই পদক্ষেপে সাধারণ ভোক্তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতে, কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হলে ভেজালকারীরা আর সহজে বাজারে দাঁড়াতে পারবে না। তবে তারা এটাও চান যে, এ ধরনের অভিযান যেন নিয়মিত হয়, শুধু বিশেষ ঘটনায় নয়।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

যদিও এ ঘটনার পর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তবু বাস্তবে কত দ্রুত তা কার্যকর হবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যে ভেজাল রোধে আইনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে যে তারা কোথা থেকে, কী ধরনের খাবার কিনছেন।

খাদ্যে ভেজাল রোধে আদালতের এ সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে হলে এ ধরনের অভিযানের পাশাপাশি সার্বিকভাবে খাদ্যশিল্পে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং কড়া নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। এখন দেখার বিষয়, এই পদক্ষেপ কতটা বাস্তবায়িত হয় এবং ভবিষ্যতে এর কী প্রভাব পড়ে।

এম আর এম – ১৫০১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button