বাংলাদেশ

৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ফল প্রকাশ: উত্তীর্ণ ১০ হাজার ৬৪৪ জন

Advertisement

৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আজ রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রকাশিত এ ফলাফলে মোট উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ৬৪৪ জন প্রার্থী। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন চাকরিপ্রার্থী। ফলাফল প্রকাশের মধ্য দিয়ে দেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ নিয়োগ পরীক্ষার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হলো।

পরীক্ষার বিস্তারিত ও আবেদনকারীর সংখ্যা

গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের ২৫৬টি কেন্দ্রে একযোগে ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার এই পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ) উত্তর দিতে হয় প্রার্থীদের। প্রশ্নপত্রে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক বিষয়সহ বিভিন্ন বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

প্রথমে ৪৭তম বিসিএসের জন্য আবেদন জমা পড়ে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭টি। এত বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ১০ হাজার ৬৪৪ জন উত্তীর্ণ হওয়ায় প্রতিযোগিতার তীব্রতা সহজেই অনুমেয়।

শূন্য পদ ও নিয়োগের কাঠামো

৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মোট ৩ হাজার ৪৮৭টি ক্যাডার শূন্যপদ রয়েছে। পাশাপাশি ২০১টি নন-ক্যাডার পদও ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলে মোট ৩ হাজার ৬৮৮টি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। পদসংখ্যা তুলনামূলক বেশি হলেও আবেদনকারীর সংখ্যা যেহেতু কয়েক লাখ, তাই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা হবে অত্যন্ত কঠিন।

বিসিএস পরীক্ষার ধাপসমূহ

বিসিএস পরীক্ষা মূলত তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হয়—
১) প্রিলিমিনারি (MCQ) পরীক্ষা
২) লিখিত পরীক্ষা
৩) মৌখিক পরীক্ষা

প্রথম ধাপ পেরিয়ে যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের সামনে অপেক্ষা করছে দীর্ঘ লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষায় সাধারণত ৯০০ থেকে ১,০০০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে এবং তা কয়েকদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। পরে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

পিএসসির রোডম্যাপ ও ফল প্রকাশের গতি

সম্প্রতি সরকারি কর্ম কমিশন ঘোষণা করেছে, প্রতিবছর একটি বিসিএস সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়েছে তারা। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, নভেম্বরে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং পরবর্তী বছরের অক্টোবরের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের রোডম্যাপ হাতে নেওয়া হয়েছে।

৪৭তম বিসিএসেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই প্রিলিমিনারির ফল নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করা হলো। এর আগেই ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল মাত্র ১৩ দিনের মধ্যেই প্রকাশ করেছিল কমিশন।

চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া

ফল প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন প্রার্থীরা। উত্তীর্ণ প্রার্থীরা আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে যারা এবার সফল হননি তারা নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। অনেক প্রার্থীই বলছেন, প্রশ্নপত্র তুলনামূলক সহজ হওয়ায় প্রতিযোগিতা ছিল কঠিন। তবে অনেকে স্বচ্ছতা ও দ্রুত ফল প্রকাশের জন্য পিএসসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

বিসিএস: তরুণদের স্বপ্নপূরণের সেতু

বাংলাদেশে বিসিএস শুধু একটি চাকরির পরীক্ষা নয়; এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তরুণদের কাছে স্বপ্নপূরণের সেতু। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মানে ভবিষ্যতের নেতৃত্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এত বড় প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যারা উত্তীর্ণ হন, তারা দেশের সিভিল সার্ভিসের জন্য যোগ্য মানবসম্পদ হিসেবে ভূমিকা রাখেন।

পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতি

প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এখন থেকে লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোযোগী হতে হবে। সাধারণত প্রিলিমিনারির ফলাফল প্রকাশের কয়েক মাস পর লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করে পিএসসি। তাই এই সময়টি কাজে লাগিয়ে বিস্তারিত সিলেবাস ও পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্র অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ ১০ হাজার ৬৪৪ জন প্রার্থীর জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। তবে প্রকৃত চ্যালেঞ্জ শুরু হবে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে। বিশ্লেষকদের মতে, তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা ও যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন করা গেলে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে। এখন জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধ আগামী ধাপের দিকে, যেখানে নির্ধারিত হবে ভবিষ্যতের সিভিল সার্ভিসের চেহারা।

এম আর এম – ১৫৫৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button