বিশ্ববিখ্যাত ভিডিও গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক আর্টস (Electronic Arts/EA) শীঘ্রই নতুন মালিকানা কাঠামোর অধীনে কাজ করবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (PIF) নেতৃত্বে গঠিত বিনিয়োগকারী দল ইলেকট্রনিক আর্টসকে কিনে নেওয়ার জন্য প্রায় চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছেছে।
প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, এই অধিগ্রহণের মূল্য ৫০ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার হতে পারে। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লিভারেজড বাইআউট (Leveraged Buyout) হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ইলেকট্রনিক আর্টস: গেমিং ইন্ডাস্ট্রির অগ্রদূত
ইলেকট্রনিক আর্টস গেমিং দুনিয়ায় একটি বিশাল নাম। ফিফা সিরিজ, ব্যাটেলফিল্ড, ন্যাডিয়া গেমসসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গেম ইএ নির্মাণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রাইভেট কোম্পানি না হওয়ায় সবসময় শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হয়। তবে প্রাইভেট কোম্পানিতে রূপান্তরিত হলে ইএ পরিচালনা আরও নমনীয় ও কৌশলগতভাবে করা সম্ভব হবে।
লিভারেজড বাইআউটের মাধ্যমে কোনও কোম্পানি কেনার সময় মূলত ঋণ নেওয়া হয়। এরপর কোম্পানির নিজস্ব সম্পদ ও নগদ প্রবাহ ব্যবহার করে সেই ঋণ পরিশোধ করা হয়।
বিনিয়োগকারী দল এবং তাদের প্রভাব
এই বিশাল চুক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রাইভেট ইকুইটি প্রতিষ্ঠান সিলভার লেক (Silver Lake)। এছাড়া অংশীদার হিসেবে আছে অ্যাফিনিটি পার্টনারস (Affinity Partners), যা প্রতিষ্ঠা করেছেন জ্যারেড কুশনার।
মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, অ্যাফিনিটি পার্টনারসের অর্থের মূল উৎস হচ্ছে সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, PIF ইতিমধ্যেই ইলেকট্রনিক আর্টসের প্রায় ১০ শতাংশ শেয়ার কিনে রেখেছে। এর ফলে চূড়ান্ত চুক্তিতে সৌদি আরবের অংশগ্রহণ সরাসরি ইএ-এর মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।
সৌদি আরবের গেমিং বিনিয়োগ: লক্ষ্য প্রযুক্তি ও বৈচিত্র্য
গত কয়েক বছর ধরে সৌদি আরব গেমিং শিল্পে বড় ধরনের বিনিয়োগ করছে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তেলের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং প্রযুক্তি ও বিনোদন শিল্পে বৈশ্বিক প্রভাব বৃদ্ধি করা।
২০২১ সালে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান প্রতিষ্ঠা করেন স্যাভি গেমস গ্রুপ (Savvy Games Group)। এই গ্রুপের মাধ্যমে সৌদি আরব গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখতে পারছে।
PIF-এর মালিকানায় রয়েছে:
- অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ড (Activision Blizzard) – কল অব ডিউটি, ওয়ার্ল্ড অব ওয়ারক্রাফটের নির্মাতা
- টেক-টু ইন্টারঅ্যাকটিভ (Take-Two Interactive) – গ্র্যান্ড থেফট অটো, বর্ডারল্যান্ডসের নির্মাতা
- নিনটেন্ডো (Nintendo) – উল্লেখযোগ্য শেয়ার
যদিও ২০২৪ সালে নিনটেন্ডোর শেয়ার কিছুটা কমানো হয়েছে, তবু PIF-এর প্রভাব এখনো গুরুত্বপূর্ণ।
ইএ অধিগ্রহণের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইলেকট্রনিক আর্টসের মতো গেমিং জায়ান্ট নতুন মালিকানার ছায়ায় প্রবেশ করলে তার কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরও দ্রুত ও স্বাধীন হবে। এতে:
- গেমিং খাতে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
- গ্লোবাল মার্কেটে ইএ-এর প্রভাব বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR), মোবাইল গেমিং ও ক্লাউড গেমিং সেক্টরে।
- সৌদি আরবের প্রযুক্তি খাতে বৈশ্বিক প্রভাব আরও দৃঢ় হবে।
সৌদি আরবের বিনিয়োগে গেমিং ইন্ডাস্ট্রি কেবল অর্থনৈতিকভাবে নয়, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগতভাবে বিশ্ব মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করতে পারবে।
গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
বিশ্বজুড়ে গেমিং শিল্পের বৃদ্ধি ধীরে হলেও অব্যাহত। বিশেষ করে মোবাইল ও ক্লাউড গেমিং, AR/VR প্রযুক্তি, এবং ইস্পোর্টসের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এই শিল্পকে আকর্ষণীয় করছে।
ইলেকট্রনিক আর্টসের অধিগ্রহণের ফলে:
- নতুন গেম ফ্র্যাঞ্চাইজ তৈরি হবে।
- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও R&D ত্বরান্বিত হবে।
- গ্লোবাল মার্কেটে নতুন স্ট্র্যাটেজি ও অংশীদারিত্বের সুযোগ তৈরি হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সৌদি আরবের বিনিয়োগের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের গেমিং শিল্পের মানচিত্রও পাল্টে যাবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
- ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল: ইএ-র অধিগ্রহণ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লিভারেজড বাইআউট হতে চলেছে।
- ম্যাশাবল: সৌদি আরব গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে।
- বিশ্লেষক মন্তব্য: ইলেকট্রনিক আর্টস প্রাইভেট কোম্পানি হওয়ায় আরও কৌশলগত স্বাধীনতা পাবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের জামাতা ও সৌদি আরবের অংশগ্রহণে ইলেকট্রনিক আর্টসের অধিগ্রহণ কেবল ব্যবসায়িক লেনদেন নয়, এটি বিশ্বব্যাপী গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে একটি নতুন অধ্যায়। এটি ইএ-এর কৌশলগত স্বাধীনতা বৃদ্ধি করবে, এবং সৌদি আরবের প্রযুক্তি ও বিনোদন খাতে প্রভাব আরও দৃঢ় হবে।
এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে, গেমিং বিশ্বে নতুন দিকনির্দেশনা, নতুন বিনিয়োগ এবং বৈশ্বিক প্রভাবের দিগন্ত আরও প্রসারিত হবে।
MAH – 13049 I Signalbd.com



