আঞ্চলিক

পালিয়েছে ‘মা ও শিশু কল্যাণ সংস্থা’র পরিচালক, টিএমএসএস অফিসে ভাঙচুর

Advertisement

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনিবন্ধিত একটি এনজিওর পরিচালক কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা ভুলবশত টিএমএসএস কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একজনকে আটক করে। ইতোমধ্যে সংস্থার আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রতারণার ঘটনা ও পরিচালকের পলায়ন

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘মা ও শিশু কল্যাণ সংস্থা’ নামের একটি ভুয়া এনজিও দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষকে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে আসছিল। সংস্থার পরিচালক মোকসেদুল ইসলাম হঠাৎ প্রায় ১৭ কোটি টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দেন। হঠাৎ এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রাহকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

ভাঙচুরের ঘটনা ও পুলিশের পদক্ষেপ

বুধবার রাতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা শহরের সিসিডিবি মোড়ে ওই এনজিওর বাসভবনে ভিড় করেন। সেখানে টিএমএসএসের ভাড়া করা অফিস থাকায় অনেকেই ভেবেছিলেন সেটিই মা ও শিশু কল্যাণ সংস্থার কার্যালয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, কয়েকজন যুবক জোর করে ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মো. আসিফ (২৫) নামে এক যুবককে আটক করে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টিএমএসএস কর্তৃপক্ষের দাবি

ভাঙচুরের শিকার হওয়া টিএমএসএসের জোনাল ম্যানেজার নিখিল চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের অফিসের সঙ্গে ওই ভুয়া এনজিওর কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা বারবার গ্রাহকদের বুঝিয়েছি, কিন্তু তারা শোনেনি। শেষ পর্যন্ত জোরপূর্বক প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।”
তিনি আরও জানান, অফিসে থাকা কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন এবং পুলিশি হস্তক্ষেপের পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

আটক ও গ্রেপ্তার হওয়া কর্মকর্তারা

মা ও শিশু কল্যাণ সংস্থার পরিচালক মোকসেদুল ইসলাম পালিয়ে গেলেও এর কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ম্যানেজার মোসা. সালমা আক্তার, ক্যাশিয়ার সুমেরা খাতুন এবং ফিল্ড অফিসার মনোয়ারুল ইসলাম, হালিমা খাতুন ও নাফিসা খাতুন। পুলিশ তাদের আদালতে সোপর্দ করেছে।

ভুক্তভোগীদের ক্ষোভ

গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, এনজিওটি বিনিয়োগের নামে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেকেই জীবনভর সঞ্চিত অর্থ সেখানে বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন সব টাকা হারিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এই প্রতারণার ঘটনায় বহু পরিবার আর্থিক সংকটে পড়বে।

আগেও ঘটেছে অনুরূপ প্রতারণা

বাংলাদেশে এর আগেও ভুয়া এনজিও বা মাইক্রোফিন্যান্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী প্রতারণার শিকার হয়েছে। নিবন্ধনহীন এসব প্রতিষ্ঠান দ্রুত লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। পরে হঠাৎ করেই প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে পরিচালক পালিয়ে যায়।

প্রশাসনের অবস্থান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মতিউর রহমান বলেন, “পরিচালক পালিয়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহকরা বিভ্রান্ত হয়ে টিএমএসএস অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছে। একজনকে আটক করা হয়েছে, এবং পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় মানুষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে তারা ভুয়া সংস্থার ফাঁদে না পড়েন।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনিবন্ধিত এনজিওগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নিবন্ধন ও কার্যক্রমের ওপর আরও কঠোর নজরদারি না থাকলে এ ধরনের প্রতারণা বাড়তে থাকবে। একইসঙ্গে তারা জনগণকে সতর্ক করে বলেছেন, বিনিয়োগের আগে অবশ্যই সংস্থার বৈধতা যাচাই করা জরুরি।

এখন বড় প্রশ্ন হলো, গ্রাহকদের হারানো কোটি কোটি টাকা তারা আদায় করতে পারবেন কি না। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। তবে স্থানীয়দের আশঙ্কা, অধিকাংশ অর্থই হয়তো আর উদ্ধার সম্ভব হবে না।

এম আর এম – ১৫১৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button