ক্রিকেট

ভারতের কাছে হেরেও সেমিফাইনালের আশা বাঁচল বাংলাদেশের

Advertisement

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য এশিয়া কাপ ২০২৫-এর সুপার ফোর পর্যায়ের ভারত ম্যাচটি একবারে হতাশা এবং আশা—দুটোই বয়ে আনল। ২০ ওভারের ম্যাচে ভারতকে টার্গেটের পেছনে থামাতে না পারায় বাংলাদেশ ৪১ রানে হেরে গেল, কিন্তু এখনো সেমিফাইনালে পৌঁছানোর সম্ভাবনা আছে। বৃহস্পতিবার যদি পাকিস্তানকে হারাতে পারে বাংলাদেশ, ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে তারা।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ: আশার শুরু, হতাশার শেষ

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সুপার ফোরের এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি শুরু হয় ওপেনার তানজিদ হাসানের ব্যাটিং দিয়ে। কিন্তু শুরুর কয়েক বলের মধ্যেই ভারতের পেসার ভুমরার সুন্দর লেন্থে তানজিদ মিড অনে সহজ ক্যাচ দিয়ে আউট হন। এরপর ব্যাটিংয়ে নামেন পারভেজ হোসেন, যিনি প্রথম ৭ বল খালি হাতে ছিলেন। যদিও বুমরাকে এক ছক্কা মারার সৌভাগ্য হয়, শেষ পর্যন্ত ১৯ বলে ২১ রান করে কুলদীপ যাদবের হাতে ক্যাচ দেন।

পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৪৪ রান। তখন মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা এখনও সম্ভব। কিন্তু একে একে উইকেট পড়তে শুরু করলে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের আশা ভেঙে যায়।

সাইফ হাসানের ব্যাটিংয়ে টিকে ছিল বাংলাদেশের লড়াই

দলকে কিছুটা লড়াই দেখানোর সুযোগ আসে সাইফ হাসান এর ব্যাট থেকে। তিনি ৫১ বলে ৬৯ রান সংগ্রহ করেন, ৩ চার এবং ৫ ছক্কা মারেন। দু’বার জীবন পান—একবার হার্দিক পান্ডিয়া এবং একবার সাঞ্জু স্যামসন এর সৌজন্যে। তবে শেষ পর্যন্ত অক্ষর প্যাটেলের হাতে ক্যাচ দেওয়ার মাধ্যমে ম্যাচ থেকে বিদায় নেন।

তাওহিদ হৃদয় ১০ বল খেলেও মাত্র ৭ রান করেন। এছাড়া অন্য ব্যাটসম্যানরা দুই অঙ্কের রান করতেও পারেননি। ফলাফল, ১২৭ রানে অলআউট বাংলাদেশের। ২০ ওভারের টার্গেট ১৬৮ রানে পৌঁছানো ভারত ৪১ রানে জয় নিশ্চিত করে।

বাংলাদেশ বোলিং: ভালো শুরু, মধ্যবিত্ত পারফরম্যান্স

বোলিংয়ে বাংলাদেশ প্রথমে ভালো শুরু করতে পারেনি। তবে শেষ দিকে রিশাদ হোসেন, সাইফউদ্দিন এবং অন্যান্য বোলাররা দলের জন্য কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি করেন।

  • পাওয়ার প্লের পর রিশাদ হোসেন দুই উইকেট নেন এবং ভারতের ওপেনিং জুটি ভাঙেন।
  • সাইফউদ্দিন শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান দেন।
  • মোস্তাফিজুর রহমান এবং তানজিম ইকবাল যথাযথ চাপে রাখলেও ভারতের রান থামাতে পারেননি।

ভারতের ব্যাটিংয়ে অভিষেক শর্মা ৩৭ বলে ৭৫ রান করেন, হার্দিক পান্ডিয়া ৩৮ এবং শুবমান গিল ২৯ রান করেন।

ভারতের কাছে হারের ধারাবাহিকতা

টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ধরার ধারাবাহিক হার ১৭ ম্যাচে ১৬। বুধবারের ম্যাচে সেই ধারা অব্যাহত হলো। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা চেষ্টা করলেও ভারতীয় বোলারদের ধাঁধা মেলাতে পারেননি।

তবে শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারালে বাংলাদেশের ফাইনালে যাওয়ার আশা এখনও জীবিত আছে। এশিয়া কাপের ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইতিমধ্যেই ভারত নিশ্চিত।

আজকের ম্যাচ এবং আগামী পথ

বাংলাদেশের জন্য এখন শুধুমাত্র পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।

  • যদি বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারাতে পারে, তারা ফাইনালে উঠবে।
  • রোববার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে ভারত।
  • অধিনায়ক জাকের আলী এবং দলের বোলিং বিভাগকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে, যাতে ফাইনালে আরও ভালো পারফরম্যান্স দেখা যায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত: ২০ ওভারে ১৬৮/৬

  • ব্যাটসম্যান: অভিষেক শর্মা ৭৫, হার্দিক পান্ডিয়া ৩৮, গিল ২৯, অক্ষর প্যাটেল ১০
  • বোলার: রিশাদ হোসেন ২/২৭, তানজিম ১/২৯, মোস্তাফিজ ১/৩৩, সাইফউদ্দিন ১/৩৭

বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১২৭

  • ব্যাটসম্যান: সাইফ হাসান ৬৯, পারভেজ হোসেন ২১
  • বোলার: কুলদীপ যাদব ৩/১৮, বুমরা ২/১৮

ফলাফল: ভারত ৪১ রানে জয়ী
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ: অভিষেক শর্মা

বাংলাদেশের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে একাধিক ভরসা ছিল, কিন্তু ভারতীয় বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানরা তেমন আক্রমণ করতে পারেননি।

  1. ব্যাটিং চ্যালেঞ্জ: ওপেনাররা দ্রুত আউট হওয়ায় ভাঙনের পরিপ্রেক্ষিতে দলের সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে।
  2. সাইফ হাসানের ব্যাটিং: দলকে লড়াই দেখানোর সুযোগ দেয়, কিন্তু একা পর্যাপ্ত নয়।
  3. বোলিং এবং ফিল্ডিং: পাওয়ার প্লে পরে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। বিশেষ করে রিশাদ হোসেনের থ্রো এবং উইকেট নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
  4. ফাইনাল সম্ভাবনা: পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলেই ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হওয়া নিশ্চিত।

এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা তাদের দলের জন্য আশাবাদী। তবে ফাইনালে যেতে হলে ব্যাটিংয়ে ধৈর্য, বোলিংয়ে স্থিতিশীলতা এবং ফিল্ডিংয়ে সঠিক কৌশল প্রয়োজন।

MAH – 13008 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button