বিশ্ব

আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে যুদ্ধ হলে প্রস্তুত: ইউরোপকে হুঁশিয়ারি পুতিনের

Advertisement

মস্কো: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করতে চায় না। তবে যদি ইউরোপ যুদ্ধের পথ বেছে নেয়, রাশিয়া সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। পুতিনের এই মন্তব্য বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর, ২০২৫) মস্কোর একটি বিনিয়োগ ফোরামে বক্তৃতা দেওয়ার সময় পুতিন বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যদি যুদ্ধ করা হয়, আমরা তা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। ইউরোপ যে শান্তির শর্তগুলো প্রস্তাব করছে, সেগুলো আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”

পুতিনের বক্তব্য মূলত ইউক্রেন-ইস্যুতে ইউরোপের ভূমিকা এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে। তিনি দাবি করেছেন যে, ইউরোপ নিজেই ইউরোপীয় সমাধান প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে গেছে এবং তারা যুদ্ধকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগও করেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ ও শান্তি প্রক্রিয়া

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনার জন্য রাশিয়ায় উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার। যদিও তারা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য এসেছিলেন, তবে মস্কোর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় পুতিন তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেননি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের এই কঠোর বার্তা ইউরোপের উদ্দেশ্যে একটি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, তিনি চুক্তির আড়ালে কোনো গোপন খেলায় বিশ্বাসী নন।

ডাবলিন সফরে থাকা জেলেনস্কি বলেন, “যুদ্ধ শেষ করার জন্য এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে। পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে আমেরিকার কাছ থেকে সরাসরি বার্তা পাওয়ার প্রত্যাশা করছি।” তিনি আরও জানান যে, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে তিনি প্রস্তুত, তবে এটি মস্কো আলোচনার ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে।

পুতিনের বক্তব্যের প্রেক্ষাপট

পুতিনের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি এসেছে এমন সময়, যখন বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরতি ও শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার চাপ বেড়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের কারণে ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় দেশগুলো অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।

পুতিন উল্লেখ করেছেন যে, ইউরোপীয়রা কোনো শান্তিপূর্ণ এজেন্ডায় নেই। বরং তারা যুদ্ধকে সমর্থন করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের বক্তব্য কেবল হুঁশিয়ারি নয়, এটি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেওয়ার একটি কৌশলও হতে পারে। রাশিয়ার এই রণনীতি প্রমাণ করে যে, তারা কূটনৈতিক চাপের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে প্রস্তুত।

যুদ্ধ না হলে কী হয়?

পুতিনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করতে চায় না। তারা এখনও কূটনৈতিক সমাধানের জন্য দ্বার উন্মুক্ত রেখেছে। তবে ইউরোপ যদি যুদ্ধ শুরু করে, রাশিয়া তা মোকাবেলার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের এই রণনীতি মূলত ইউরোপ এবং ন্যাটোকে সতর্ক করার জন্য। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি ইঙ্গিত যে, যদি শান্তি প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়, তাহলে যুদ্ধের সম্ভাবনা উন্মুক্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধি মস্কোতে আলোচনা করতে এসেছেন। যদিও বৈঠক এখনও সম্পন্ন হয়নি, তবে পুতিনের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের স্থায়ী সমাধি খুঁজে পাওয়া কঠিন। পুতিন স্পষ্ট করেছেন যে, ইউরোপের শান্তিচুক্তি প্রস্তাব রাশিয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাই, যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

ইউক্রেনের অবস্থান

উল্লেখ্য, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন যে, যুদ্ধ শেষ করার জন্য বর্তমান সময় আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে সরাসরি আমেরিকার কাছ থেকে বার্তা পাওয়ার প্রত্যাশা রাখছেন।

জেলেনস্কি আরও জানান, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে প্রস্তুত, তবে এটি মস্কো আলোচনার সফলতার ওপর নির্ভর করবে। ইউক্রেন চায় যে, চুক্তির আড়ালে কোনো গোপন খেলা না হয়। তারা চায় একটি স্বচ্ছ ও স্থায়ী শান্তি প্রক্রিয়া।

আন্তর্জাতিক প্রভাব

পুতিনের এই বক্তব্যের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলো, যারা যুদ্ধ ও শান্তি প্রক্রিয়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশি ভোগ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে নতুন করে কূটনৈতিক ও সামরিক প্রস্তুতি নিতে হবে। যুদ্ধ না হলেও, রাশিয়ার প্রস্তুতি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি উত্তেজিত করতে পারে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষণ

পুতিনের বক্তব্য কেবল হুঁশিয়ারি নয়, এটি একটি কূটনৈতিক কৌশল। রাশিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাচ্ছে, তারা শান্তি চায় কিন্তু যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার এই কৌশল ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি নতুন মোড় আনতে পারে।

সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ

পুতিনের হুঁশিয়ারির পর, ইউরোপীয় দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নতুনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যুদ্ধ শুরু হবে কি না, শান্তি প্রক্রিয়া কতটা সফল হবে, এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কেমন হবে—সবই এখন অনিশ্চিত।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়ার হুঁশিয়ারি কেবল সামরিক নয়, এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতি, অর্থনীতি এবং বিশ্ব রাজনীতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

পুতিন স্পষ্ট করেছেন যে, রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করতে চায় না। তবে যদি যুদ্ধ হয়, তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ইউরোপীয় দেশগুলোকে সতর্ক করেছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের পথে এগোলে তারা তা মোকাবেলার জন্য সক্ষম।

এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন নতুনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য। যুদ্ধ না হলেও, রাশিয়ার প্রস্তুতি একটি শক্তিশালী হুঁশিয়ারি।

পুতিনের বার্তা বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে—যুদ্ধ না হলেও যুদ্ধের সম্ভাবনা, কূটনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রশ্ন এখন আগের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ।

MAH – 14114 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button