স্বাস্থ্য

লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজে লাগতে পারে যেসব পানীয়

Advertisement

লিভার আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। রক্ত পরিশোধন, পিত্ত উৎপাদন, পুষ্টি শোষণ এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ—সবই লিভারের মাধ্যমে হয়। সুস্থ লিভারের জন্য সঠিক হাইড্রেশন ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস অপরিহার্য। তবে শুধুমাত্র পানি নয়, কিছু প্রাকৃতিক পানীয়ও লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।

লেবু ও আদার পানীয়

সকালে গরম পানিতে লেবু ও আদা মিশিয়ে পান করা লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়তা করে এবং লিভারের এনজাইম কার্যক্রমকে উন্নত করে। আদার প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য লিভারের প্রদাহ কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। নিয়মিত লেবু ও আদার পানীয় হজম শক্তি বাড়ায়, পেট ফাঁপা কমায় এবং লিভারের স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করে।

গ্রিন টি

গ্রিন টি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি পানীয়, যা লিভারের কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন ২-৩ কাপ গ্রিন টি পান করলে লিভারের চর্বি কমে এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ঝুঁকি হ্রাস পায়। গ্রিন টি লিভারের কোষ পুনর্জীবন এবং সুরক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

বিটের রস

বিটের রস লিভারের জন্য একটি প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা বিটেইন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। বিটের রস অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাধ্যমে লিভারকে টক্সিন ও অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি আপেল বা গাজরের রসের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে স্বাদ ও পুষ্টি উভয়ই বাড়ে।

কফি

পরিমিত পরিমাণে কফি পান করা লিভারের জন্য উপকারী। কফিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং বিশেষ যৌগ লিভারের প্রদাহ কমায় এবং সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। প্রতিদিন দুই কাপ কালো কফি (চিনি বা ক্রিম ছাড়া) লিভারের কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং নতুন কোষের উৎপাদনকে উৎসাহিত করে।

ভেষজ চা

কিছু ভেষজ চা লিভারের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। মিল্ক থিসল চা (সিলিমারিন সমৃদ্ধ) লিভারের কোষকে টক্সিন থেকে রক্ষা করে এবং কোষ পুনর্জন্মকে উৎসাহিত করে। হলুদ চা প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ভেষজ চা পান করলে লিভারের কার্যক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদে উন্নত হয়।

নারকেল পানি

নারকেল পানি লিভারের জন্য একটি প্রাকৃতিক হাইড্রেশন সরবরাহ করে। এতে থাকা পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লিভারের কোষকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত নারকেল পানি পান লিভারের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়াও উন্নত করে।

ফলের রস

আপেল, পেয়ারা, কমলা এবং আঙ্গুরের মতো ফলের রস লিভারের জন্য উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লিভারের কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত চিনি যুক্ত ফলের রস পরিহার করা উচিত।

লিভারের জন্য সঠিক পানীয় নির্বাচন

লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষায় পানীয়ের গুণাগুণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক এবং কম প্রক্রিয়াজাত পানীয় বেছে নিলে লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞ মতামত

হেপাটোলজিস্টরা বলছেন, লিভারের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি এবং উপরের প্রাকৃতিক পানীয়ের সমন্বয় করা উচিত। এছাড়া ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং চর্বিযুক্ত খাবার সীমিত করার পরামর্শ দেন তারা।

লিভারের সুস্থতা আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। লেবু ও আদা পানীয়, গ্রিন টি, বিটের রস, কফি, ভেষজ চা, নারকেল পানি এবং ফলের রস—এই পানীয়গুলো লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত সঠিক পানীয় নির্বাচন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা লিভারের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।

এম আর এম – ১৫১০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button