বিশ্ব

আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ইরান

Advertisement

ইরান সফলভাবে একটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা চালিয়েছে বলে দেশটির পার্লামেন্ট সদস্য ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। এ পরীক্ষার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্য নতুন মাত্রা পেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ক্ষেপণাস্ত্রটি রাজধানী তেহরানের আশপাশের গোপন একটি স্থান থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। যদিও ইরানের কেন্দ্রীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এর দায়িত্ব স্বীকার করেনি, ধারণা করা হচ্ছে দেশটির শক্তিশালী বাহিনী বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি) এই উৎক্ষেপণের পেছনে রয়েছে।

ঘটনাটির বিস্তারিত

২০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাতে আকাশে হঠাৎ উজ্জ্বল রেখা দেখা গেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়। তেহরান, গোরগান, সারি ও সেমনানসহ বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা ধোঁয়ার রেখা ও তীব্র শব্দের ভিডিও ধারণ করেন। পরে জানা যায়, এটি ছিল ইরানের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার অংশ।
ইরানি সংসদ সদস্য মোহসেন জাঙ্গানে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে জানান, এটি দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় এক নতুন মাইলফলক। তার ভাষায়, ক্ষেপণাস্ত্রটি এখন পর্যন্ত ইরানের তৈরি সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং পরীক্ষাটি সফল হয়েছে।

ইরান দীর্ঘদিন ধরেই স্বল্প থেকে মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এতদিন গোপন পর্যায়ে ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খোরামশাহর সিরিজের উন্নত সংস্করণ তৈরি করেছে দেশটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বশেষ উৎক্ষেপণটি খোরামশাহর-৫ অথবা নতুন কোনো প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র হতে পারে, যার পাল্লা ১০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি হতে পারে।
এর আগে ২০২৩ সালে ইরান ‘খাইবার’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছিল, যার পাল্লা ছিল ২ হাজার কিলোমিটার। এবারকার পরীক্ষার মাধ্যমে দেশটি দেখাতে চাইছে যে, তাদের সামরিক সক্ষমতা শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও কার্যকর।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উৎক্ষেপণ মধ্যপ্রাচ্যের বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও তীব্র করবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বরাবরই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। পশ্চিমা দেশগুলো আশঙ্কা করছে, ইরানের এই সক্ষমতা ভবিষ্যতে পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে ব্যবহার হতে পারে।
অন্যদিকে, ইরানের মিত্ররা বলছে, দেশটির এই সক্ষমতা মূলত প্রতিরোধমূলক কৌশলের অংশ। তাদের মতে, ইরান যে কোনো বিদেশি আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পরিসংখ্যান ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ

প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, উৎক্ষেপণকৃত ক্ষেপণাস্ত্রটি দুই ধাপে পরিচালিত হয় এবং কঠিন জ্বালানি ব্যবহার করে। এর পাল্লা সম্ভাব্যভাবে ৫,৫০০ কিলোমিটারের বেশি, যা একে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের শ্রেণিতে ফেলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর গতি ম্যাক ১৬ পর্যন্ত হতে পারে এবং এটি প্রায় দুই টন ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারে বর্তমানে কয়েকশত স্বল্প ও মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইরান মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের অধিকারী।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উৎক্ষেপণ ইরানের একটি বার্তা — তারা আন্তর্জাতিক চাপ বা নিষেধাজ্ঞার মুখে কোনোভাবেই তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা সীমিত করবে না। একইসাথে এটি এমন সময়ে ঘটলো, যখন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠক চলছিল। অনেকে বলছেন, এটি কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ।
অন্যদিকে, সমালোচকরা মনে করেন, ইরানের এই পদক্ষেপ অঞ্চলে নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করতে পারে, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করবে।

সমাপনী মন্তব্য

ইরানের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘটনাটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন মাত্রার কৌশলগত ভারসাম্য তৈরি করেছে। এটি শুধু প্রতিরক্ষা নীতি নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, এ পরীক্ষার পর বিশ্বশক্তিগুলো কী পদক্ষেপ নেবে এবং ইরান কিভাবে তাদের সামরিক কৌশল আরও এগিয়ে নেবে।

এম আর এম – ১৪৭৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button