বিশ্ব

‘জয় শ্রী রাম’ না বলায় এবার ভারতে ইমামকে মারধর

Advertisement

ভারতের উত্তরপ্রদেশে আবারও ধর্মীয় নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। আলিগড় জেলার এক ইমামকে ‘জয় শ্রী রাম’ না বলার কারণে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় পুলিশ বলছে, এটি সাধারণ মারধরের ঘটনা; তবে ভুক্তভোগীর দাবি, তাকে জোর করে ধর্মীয় স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এই ঘটনা দেশজুড়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

ঘটনার বিস্তারিত

২০ সেপ্টেম্বর রাতে আলিগড় জেলার লোধা ব্লকের বুলাকঘারি গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ইমামের নাম মুস্তাকিম। অভিযোগ অনুযায়ী, সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন যুবক তার পথ রোধ করে তাকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলার জন্য চাপ দেয়। তিনি অস্বীকার করলে হামলাকারীরা লাঠি দিয়ে তার ওপর চড়াও হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে মারধর করে।

ইমাম মুস্তাকিম বলেন, “কিছুদিন ধরে কয়েকজন ছেলে আমাকে উত্যক্ত করছিল। সেদিন তারা সাইকেল থামিয়ে আমাকে ধর্মীয় স্লোগান দিতে বলে। আমি রাজি না হলে তারা আমাকে পেটাতে থাকে এবং হুমকি দেয় এখানে কবর দিয়ে দেওয়ার।”

পুলিশের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। আলিগড় শহরের পুলিশ সুপার মৃগাঙ্ক শেখর পাঠক জানান, “এটি দুই পক্ষের মধ্যে সাধারণ মারধরের ঘটনা। কোনো ধর্মীয় বিষয় জড়িত নয় এবং কাউকে জোর করে ধর্মীয় স্লোগান দিতেও বাধ্য করা হয়নি।”

তবে পুলিশের এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে। তাদের দাবি, ঘটনাটি স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ থেকে সংঘটিত।

ভারতে মুসলিমদের ওপর হামলা

ভারতে গত কয়েক বছরে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর এমন হামলার ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান না দেওয়ায় মুসলিমদের মারধরের একাধিক ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এ ধরনের ঘটনা শুধু সামাজিক সম্প্রীতিকে ভেঙে দিচ্ছে না, বরং সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর স্থানীয় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, রাজনৈতিক মদদপুষ্ট গোষ্ঠীগুলো নিয়মিত সংখ্যালঘুদের টার্গেট করছে।

আলিগড়ের এক বাসিন্দা বলেন, “এটি শুধু সাধারণ মারধর নয়, এর মধ্যে ধর্মীয় উসকানি আছে। যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে বড় ধরনের সহিংসতা দেখা দিতে পারে।”

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ

ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ তৈরি করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া বারবার ভারত সরকারের কাছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও বাস্তবে ধর্মীয় বিভাজনমূলক ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এর ফলে ভারতের বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে মানুষকে অপমান বা আক্রমণ করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ ধরনের ঘটনা শুধু একক ব্যক্তিকে নয়, বরং পুরো সমাজের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

ভারতের দিল্লিভিত্তিক এক সমাজবিজ্ঞানী জানান, “ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে মানুষকে জোরপূর্বক স্লোগান দিতে বাধ্য করা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির একটি প্রকাশ। এই প্রবণতা ঠেকাতে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।”

আলিগড়ে ইমামের ওপর হামলার ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করছে, ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। পুলিশ এটিকে সাধারণ মারধরের ঘটনা বললেও ভুক্তভোগীর বক্তব্য ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি এই ধরনের ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, নাকি আগের মতোই বিষয়টি চাপা পড়ে যাবে?

এম আর এম – ১৪৬৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button