আঞ্চলিক

জামিন হয়নি আজও, কারাগার থেকে প্রিজন সেলে ১২ দিনের শিশুসহ সেই মা

Advertisement

খুলনায় আলোচিত নবজাতক চুরির মামলায় গ্রেফতার হওয়া শাহজাদীর জামিন আজও হয়নি। ফলে তার ১২ দিনের শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়েই থাকতে হচ্ছে কারাগারের প্রিজন সেলে। এ ঘটনায় জনমনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে খুলনা অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে শাহজাদী এবং তার মা নার্গিস বেগমের পক্ষ থেকে জামিন আবেদন করা হয়। তবে বিচারক মো. আনিসুর রহমান আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এর আগে রবিবার রাতে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে নবজাতকসহ শাহজাদীকে প্রিজন সেলে পাঠানো হয়। বর্তমানে মা ও শিশুকে আলাদা কেবিনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান বলেন,

“মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করা হবে। আমরা আশাবাদী, আদালত মানবিক দিক বিবেচনা করবেন।”

মামলা

বাগেরহাটের রামপালের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী শাহজাদীর সংসারে এর আগে চার কন্যাসন্তান রয়েছে। পরিবার ও স্বামীর প্রত্যাশা ছিল এবার ছেলে সন্তান জন্ম নেবে। কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বর রাতে সিজারিয়ান অপারেশনে পঞ্চমবারের মতো কন্যাসন্তানের জন্ম দেন শাহজাদী।

স্বামী সিরাজুল বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। পরবর্তী সময়ে তিনি স্ত্রী ও নবজাতকের খোঁজখবরও নেননি। পরিবারের চাপ ও মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে একই হাসপাতালে অন্য এক রোগীর নবজাতক ছেলে সন্তান চুরি করেন শাহজাদী।

নবজাতক চুরির পর নাটকীয় উদ্ধার

শিশু চুরির পরপরই হাসপাতালে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ সন্ধ্যার মধ্যেই চুরি যাওয়া নবজাতক উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শাহজাদীর মা নার্গিস বেগমকে আটক করা হয়। শিশুর বাবা মির্জা সুমনের দায়ের করা মামলায় শাহজাদী ও তার মাকে মানব পাচার আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও মানবিক প্রশ্ন

এই ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও সামাজিক সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, মানব পাচারের মতো একটি গুরুতর মামলায় আইনগত প্রক্রিয়া চলবে, তবে একটি ১২ দিনের নবজাতককে প্রিজন সেলে রাখতে বাধ্য করা কতটা মানবিক — সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী সামিয়া হোসেন বলেন, “মায়ের অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে অভিযুক্ত বলা যায়। কিন্তু একটি শিশুকে কারাগারে বড় হতে বাধ্য করা কোনোভাবেই ন্যায্য নয়। রাষ্ট্রের উচিত শিশুর অধিকার সুরক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।”

আইনি জটিলতা ও পরবর্তী পদক্ষেপ

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্ন আদালতের এখতিয়ার সীমিত থাকায় জামিন আবেদন বারবার নামঞ্জুর হচ্ছে। তবে দায়রা জজ আদালতে জামিন মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে শিশুর সুরক্ষার জন্য আদালত বিকল্প নির্দেশও দিতে পারেন।

আইনজীবী এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী, কোনো শিশুকে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে রাখা যাবে না। মায়ের সঙ্গে নবজাতক থাকলে তার বিশেষ যত্নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আদালত এ বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নেবেন।”

জনমনে উদ্বেগ

সাধারণ মানুষ এখন জানতে চাইছে, মা ও শিশুর ভবিষ্যৎ কী হবে। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিশু মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে মানবিক বিবেচনায় দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

খুলনার আলোচিত এই ঘটনাটি একদিকে যেমন আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতা সামনে এনেছে, তেমনি অন্যদিকে মানবিক প্রশ্নও জাগিয়েছে। মায়ের বিচার অবশ্যই হবে, তবে সেই বিচারপ্রক্রিয়ায় ১২ দিনের এক শিশুর জীবন যেন অন্ধকারে ঢেকে না যায়, সেটাই এখন দেশের মানুষের মূল চাওয়া। আগামীকাল দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন শুনানির পরপরই জানা যাবে, শাহজাদী ও তার শিশুর ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে।

এম আর এম – ১৪৫৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button