জাতীয়

নারায়ণগঞ্জে সড়কের পাশে মিলল পাঁচ বস্তা এনআইডি কার্ড

Advertisement

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে সড়কের ধারে ফেলে যাওয়া পাঁচ বস্তা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার রাতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি সাদা রঙের গাড়িতে আসা কয়েকজন ব্যক্তি দ্রুততার সঙ্গে বস্তাগুলো ফেলে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা বস্তা খুলে ভেতরে হাজার হাজার এনআইডি কার্ড, নির্বাচনী সিল এবং পোলিং অফিসারের পরিচয়পত্র দেখতে পান।

উদ্ধার হওয়া এনআইডি কার্ড কার?

গাজীপুর সদর উপজেলার ভোটারদের জন্য ২০০৮ সালে ইস্যু করা এসব এনআইডি কার্ড পরবর্তীতে বাতিল করা হয়েছিল। কারণ, ওই সময়কার কার্ডগুলো এখন আর কার্যকর নয়; পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ভোটাররা স্মার্টকার্ড গ্রহণ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধার হওয়া কার্ডগুলো আসলে পুরোনো ও পরিত্যক্ত

গাজীপুরের বিদায়ী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান বলেন,

“এই কার্ডগুলো অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে। পরে যাঁরা কার্ডের মালিক ছিলেন, তাঁরা সবাই স্মার্টকার্ড নিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী এগুলো ধ্বংস হওয়ার কথা থাকলেও কোনো এক পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় সেগুলো নষ্ট না হয়ে বাইরে চলে এসেছে।”

কীভাবে উদ্ধার হলো?

ফতুল্লা স্টেডিয়ামের সামনে রোববার রাতেই স্থানীয়রা প্রথম বস্তাগুলো দেখতে পান। তাদের সন্দেহ হলে বস্তা খুলে এনআইডি কার্ড ও নির্বাচনী সামগ্রী দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গেই খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচ বস্তা কার্ড ও অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নাজমুল হাসান বাবু বলেন,

“আমি ওই এলাকায় একটি স মিলে কাজ করি। দেখি একটি গাড়ি এসে হঠাৎ করে বস্তাগুলো ফেলে যায়। কাছে গিয়ে দেখি ভেতরে এনআইডি কার্ড ও বিভিন্ন নির্বাচনী সরঞ্জাম রয়েছে। পরে পুলিশে খবর দিলে তারা এসে উদ্ধার করে।”

পুলিশের বক্তব্য

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন,

“আমরা পাঁচ বস্তা এনআইডি কার্ড উদ্ধার করেছি। তদন্ত চলছে। বিস্তারিত তদন্তের পর জানানো হবে।”

নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত নির্বাচন কমিশনার রাকিবুজ্জামান জানান,

“উদ্ধার হওয়া কার্ডগুলো আমাদের এখানের নয়। সব কার্ড গাজীপুর সদর উপজেলার ভোটারদের। এগুলো পুরোনো ও বাতিল কার্ড।”

অন্যদিকে, গাজীপুরের বিদায়ী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন,

“এনআইডি কার্ডের পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া পোলিং অফিসারের কার্ড ও নির্বাচনী সিলগুলো আগের নির্বাচনে ব্যবহার হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী এসব জিনিস পরে ধ্বংস করার জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অবহেলার কারণেই সম্ভবত ঘটনাটি ঘটেছে।”

পরিত্যক্ত মালামাল ধ্বংসের নিয়ম কী?

নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ভোটারদের বাতিল কার্ড, ব্যালট, সিল, বা পোলিং অফিসারের কার্ড– এসব সরঞ্জাম ধ্বংস করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি কমিটি থাকে। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব জিনিস নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে ধ্বংস করার জন্য দেওয়া হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে পাওয়া এই পাঁচ বস্তা কার্ড দেখে ধারণা করা হচ্ছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এগুলো সঠিকভাবে ধ্বংস না করে অবহেলায় বাইরে ফেলে দিয়েছে।

নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, এগুলো পরিত্যক্ত কার্ড এবং কোনো কাজে আসবে না, তবুও অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের কার্ড ও নির্বাচনী সরঞ্জাম খোলা রাস্তায় পড়ে থাকা নিরাপত্তার জন্য ভালো বার্তা নয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, “যদি পুরোনো কার্ড হয় তবে কেন সেগুলো বাইরে পড়েছিল?” আবার কেউ বলছেন, “নির্বাচনী সরঞ্জাম নষ্ট করার প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হওয়া উচিত।”

নির্বাচন কমিশনের আশ্বাস

কামরুল হাসান বলেন,

“বর্তমানে উদ্ধার হওয়া সব এনআইডি কার্ড ও নির্বাচনী সামগ্রী নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কমিশনের অফিসে রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এগুলো ধ্বংস করা হবে। কারা দায়ী, তা তদন্ত করে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অতীতেও ঘটেছে এমন ঘটনা

বাংলাদেশে এর আগে বিভিন্ন সময়ে বাতিল বা পুরোনো নির্বাচনী সরঞ্জাম যথাযথভাবে ধ্বংস না করে অবহেলায় ফেলে রাখার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনায় জনগণের আস্থা নষ্ট হয়। বিশেষ করে এনআইডি কার্ডের মতো সংবেদনশীল নথি যদি বাইরে পড়ে থাকতে দেখা যায়, তাহলে ভোটাররা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিয়ে কাজ করা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ জানান, এ ধরনের ঘটনা নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা প্রকাশ করে। এক বিশেষজ্ঞ বলেন,

“এনআইডি কার্ড শুধু পরিচয়পত্র নয়, ব্যাংক লেনদেন, পাসপোর্ট, সিম নিবন্ধনসহ জীবনের নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যদিও উদ্ধার হওয়া কার্ডগুলো পুরোনো, তারপরও জনসাধারণের মনে ভয় তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।”

জনমনে যে প্রশ্নগুলো উঠছে

  1. কেন এগুলো যথাসময়ে ধ্বংস করা হলো না?
  2. দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কারা ছিল?
  3. তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
  4. ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয়, তার জন্য কী উদ্যোগ নেওয়া হবে?

নারায়ণগঞ্জে সড়কের পাশে পাঁচ বস্তা এনআইডি কার্ড উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহি ও কার্যক্রম নিয়ে। যদিও কমিশন বলছে এগুলো পুরোনো ও বাতিল কার্ড, তবুও এমন ঘটনা নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। তদন্ত চলছে, দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

MAH – 12951 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button