বিপিএল

দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটারদের চেক বাউন্স পারিশ্রমিক নিয়ে হতাশা তুঙ্গে

রাজশাহী দলের ক্রিকেটারদের বকেয়া পারিশ্রমিক নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমেই বাড়ছে। দুর্বার রাজশাহীর দেওয়া চেক দ্বিতীয়বারের মতো বাউন্স করেছে। ব্যাংক থেকে ক্রিকেটারদের জানানো হয়েছে, তাদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা জমা হবে না। এমন পরিস্থিতিতে চরম হতাশায় পড়েছেন রাজশাহী দলের ক্রিকেটাররা।

পারিশ্রমিক নিয়ে অস্থিরতা

মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজশাহী দলের কোনো ক্রিকেটারের অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা হয়নি। প্রথম দফায়ও কিছু ক্রিকেটারের চেক বাউন্স করেছিল, তখন দলীয় মালিকপক্ষ জানিয়েছিল, সত্ত্বাধিকারী শফিক রহমান দেশের বাইরে থাকায় এমনটি হয়েছে। তবে এবার শফিক রহমান দেশে থাকা সত্ত্বেও এই সমস্যার সমাধান হয়নি।

এক ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, এবার অন্তত সমস্যা মিটবে। কিন্তু ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে, আমাদের দেওয়া চেকের কোনো অর্থ নেই। এটা আসলেই হতাশাজনক। কতোবার যে একই সমস্যায় পড়ছি, তার হিসাব নেই।”

দৈনিক ভাতার বকেয়া, অনিশ্চয়তায় ক্রিকেটাররা

রাজশাহীর ক্রিকেটাররা দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক ভাতা পাচ্ছেন না। ১৮ দিনের ভাতা জমে ছিল, যার মধ্যে মাত্র ৪ দিনের ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। এই বিষয়ে এক ক্রিকেটার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের রুটি-রুজি এই পারিশ্রমিক। পারিশ্রমিক তো দিচ্ছেই না, উপরন্তু দৈনিক ভাতাও বাকি। এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। মাঠে আমাদের কাজ ঠিকঠাক করছি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিজেদের কাজ করছে না।”

বিদেশি ক্রিকেটারদের অনীহা

বিদেশি ক্রিকেটাররাও পারিশ্রমিক না পেয়ে ম্যাচ খেলার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন। গত রোববার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। পরে রাজশাহী কর্তৃপক্ষ দেশি ক্রিকেটারদের ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিকের চেক দিয়ে তাদের মাঠে নামানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু সেই চেকও এখন বাউন্স করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করেছে।

বিসিবির প্রতিশ্রুতি এবং সতর্কতা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, “আমরা ক্লাব কর্তৃপক্ষকে বারবার বলছি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। নিয়মিত তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের অগ্রগতি দেখব। ক্রিকেটারদের সন্তুষ্ট রাখার ব্যাপারে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে।” তবে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান সমাধান হয়নি।

মালিকপক্ষের বক্তব্য

রাজশাহীর ম্যানেজার মেহরাব হোসেন অপি জানিয়েছেন, “টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। আমিও এখন পর্যন্ত পারিশ্রমিক পাইনি। মালিকপক্ষ আমাকে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দিয়েছে, সেদিনের অপেক্ষায় আছি।”

ক্রিকেটারদের হতাশা ও অনিশ্চয়তা

প্রতিনিয়ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে রাজশাহীর ক্রিকেটাররা চরম হতাশায় রয়েছেন। মাঠে সাফল্য অর্জন করলেও পারিশ্রমিক নিয়ে এই অচলাবস্থা তাদের পেশাদার জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। দলটির একজন ক্রিকেটার বলেন, “বারবার আমাদের সাথে এমন আচরণ করা হচ্ছে, যা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। কতোবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে, তা শুধু আল্লাহই জানেন।”

রাজশাহী দলের বর্তমান পরিস্থিতি শুধুমাত্র তাদের ক্রিকেটারদের জন্যই নয়, পুরো টুর্নামেন্টের জন্য একটি অশনি সংকেত। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা তাদের পেশাদার মনোবল ক্ষুণ্ন করছে। বিসিবি ও মালিকপক্ষ যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে বিষয়টি আরও বড় সংকটে রূপ নিতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button