বানিজ্য

দেশের ব্যবসা খাতে অস্থিরতা, নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত

দেশের ব্যবসায়ীরা বর্তমানে চরম অস্থিরতার মধ্যে রয়েছেন। ব্যবসা পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা, বরং নতুন সমস্যায় পড়েছেন তারা। সরকারের নতুন করে ভ্যাট আরোপ এবং নীতির ধারাবাহিকতার অভাবে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা–বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম)-এর আয়োজনে ‘দেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে নীতি সমন্বয়’ শীর্ষক এক সংলাপে এসব কথা বলেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

বিনিয়োগ পরিস্থিতি এবং নীতি জটিলতা

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি গত কয়েক বছর ধরে স্থবির। জিডিপির তুলনায় বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কম। শুল্ক–কর নীতির জটিলতা বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিদ্যমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতির সংশোধন অত্যন্ত জরুরি।

ট্রেড-জিডিপি অনুপাতের গুরুত্ব

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, “আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। তবে আমার মতে, ‘ট্রেড-জিডিপি’ অনুপাত নিয়ে আলোচনা আরও গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি উল্লেখ করেন, ২০২২ সালে ভিয়েতনামের ট্রেড-জিডিপি অনুপাত ছিল ১৮৬ শতাংশ, অথচ বাংলাদেশের মাত্র ৩৪ শতাংশ। তিনি বলেন, “এ ধরনের অনুপাত বাড়াতে শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য রাজস্ব বোর্ডের উচিত নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা।”

ব্যবসায়ীদের আস্থা সংকট

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, দেশের ব্যবসায়ীরা বর্তমানে আস্থার সংকটে ভুগছেন। শুল্ক ও করের বাড়তি হার ব্যবসা পরিচালনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর আদায় ব্যবস্থায় সংস্কার আনলে এবং নগদ অর্থের পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধি করলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।

কোকাকোলা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাদাব আহমেদ খান বলেন, “আমরা সরকারকে নতুন বিনিয়োগ ও পুনর্বিনিয়োগের নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত। তবে শুল্ক–কর এবং বিনিয়োগের সুরক্ষা দিতে হবে।”

ভ্যাট এবং মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টার পরিবর্তে সম্প্রতি ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা দূর করা, কর্মসংস্থান বাড়ানোই সরকারের মূল অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং সুদহার এসব চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।”

সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং আশ্বাস

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমদ ব্যবসায়ীদের সমস্যা স্বীকার করে বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি এবং নীতিগত জটিলতা ব্যবসার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে, যা কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে।”

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “আমদানির ওপর শুল্ক বেশি হওয়া এবং নীতির ধারাবাহিকতার অভাব বিদেশি বিনিয়োগে বড় বাধা। তবে আমরা এ সমস্যা সমাধানে কাজ করছি। ধীরে ধীরে শুল্কের হার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা আছে।”

দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নতুন ভ্যাট, শুল্কের জটিলতা এবং নীতির অনিশ্চয়তা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও সরকার সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে, তবে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কার্যকর নীতিমালা বাস্তবায়ন না হলে ব্যবসা খাতে স্থবিরতা আরও বাড়তে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button