বাংলাদেশ

বঙ্গোপসাগরে ‘মীন সন্ধানী’ জাহাজের মৎস্য গবেষণা কার্যক্রম পরিদর্শন

Advertisement

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বঙ্গোপসাগরে মৎস্য অধিদপ্তরের আধুনিক গবেষণা জাহাজ ‘আর ভি মীন সন্ধানী’-এর চলমান জরিপ ও গবেষণা কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জাহাজের প্রযুক্তি, গবেষণার অগ্রগতি এবং সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি দেখেন, কীভাবে জাহাজটি সমুদ্রের গভীরতা, পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, গুণমান এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে।

আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার অগ্রগতি

‘আর ভি মীন সন্ধানী’ জাহাজটি মৎস্য গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। জাহাজে রয়েছে অত্যাধুনিক ডেপথ সেন্সর, সোনার প্রযুক্তি, ট্রল নেট এবং পানির গুণমান পরিমাপের সরঞ্জাম। এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের বিভিন্ন স্তর থেকে মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, হাঙর ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী শনাক্ত এবং পরিমাপ করতে পারেন।

পরিদর্শনের সময় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “বঙ্গোপসাগরে আমাদের মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য এই ধরনের গবেষণা অপরিহার্য। আমরা চাই সমুদ্র ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশের মৎস্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়।”

সাম্প্রতিক জরিপ কার্যক্রম

জাহাজের চলমান কার্যক্রমে ডেমারসাল সার্ভে, পেলাজিক সার্ভে এবং শ্রিম্প সার্ভে অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে:

  • ডেমারসাল সার্ভে (১০-২০০ মিটার): সমুদ্রের তলদেশের মাছ ও প্রাণী শনাক্ত করা হয়।
  • শ্রিম্প সার্ভে (১০-১০০ মিটার): চিংড়ির প্রজাতি ও তাদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়।
  • পেলাজিক সার্ভে (১০-২০০ মিটার): মধ্য ও গভীর সমুদ্রের মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী পর্যবেক্ষণ করা হয়।

শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজারের ইনানি থেকে ৫ নটিক্যাল মাইল গভীর সমুদ্রে ডেমারসাল সার্ভে করা হয়। রাতের পর কলাতলী থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল গভীর সমুদ্রে শ্রিম্প সার্ভে পরিচালনা করা হয়। এই কার্যক্রমে ২০ প্রজাতির মাছ এবং ১০ প্রজাতির চিংড়ি আহরণ করা হয়েছে। ট্রল নেটের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণও এই জরিপের অংশ ছিল।

উপস্থিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা

পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন:

  • মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের
  • মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ
  • ‘আর ভি মীন সন্ধানী’ জাহাজের স্কিপার লে. কমান্ডার শরফুদ্দিন
  • সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালক ড. মঈন উদ্দিন আহমেদ, যিনি বিভিন্ন গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করেন।

উপদেষ্টা জাহাজে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন জরিপ তথ্য, প্রাপ্ত ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ গবেষণা কার্যক্রমের পরিকল্পনা পর্যালোচনা করেন।

গবেষণা অভিযানের পরিসংখ্যান

‘আর ভি মীন সন্ধানী’ জাহাজের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫৪টি গবেষণা ক্রুজ সম্পন্ন হয়েছে। এই অভিযানে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোট ৪৫৯ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ৩৫৩ প্রজাতির মাছ
  • ২৬ প্রজাতির চিংড়ি
  • ৩০ প্রজাতির হাঙর
  • ২৭ প্রজাতির কাঁকড়া
  • ৩ প্রজাতির লবস্টার
  • ১৪ প্রজাতির সেফালোপড
  • ৬ প্রজাতির সামুদ্রিক সাপ

এই তথ্য সমুদ্র জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মৎস্য সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মৎস্য গবেষণার গুরুত্ব

বঙ্গোপসাগরের মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী সমৃদ্ধি দেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক গবেষণা ও ডেটা সংগ্রহ না করলে মাছের প্রজাতি হ্রাস বা অপ্রত্যাশিত মৎস্য সংকট দেখা দিতে পারে। ‘মীন সন্ধানী’ জাহাজের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা গভীর সমুদ্র থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে, যা দীর্ঘমেয়াদী মৎস্য ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়নে সহায়ক।

জাহাজের গবেষণা কার্যক্রম দেশের মৎস্য খাতকে আরও শক্তিশালী ও টেকসই করতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে চিংড়ি ও হাইভ্যালু মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি অপরিহার্য।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানান, ভবিষ্যতে আরও আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করে ‘মীন সন্ধানী’ জাহাজের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। এছাড়া:

  • মৎস্য প্রজাতির আবস্থান ও প্রজনন চক্র পর্যবেক্ষণ
  • সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ
  • টেকসই মৎস্য খাত উন্নয়ন
  • স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কর্মসূচি

এ ধরনের উদ্যোগ দেশের মৎস্য ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য দিকনির্দেশক হবে

পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “আমাদের লক্ষ্য বঙ্গোপসাগরের মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য উৎপাদন নিশ্চিত করা। ‘মীন সন্ধানী’ জাহাজের গবেষণা কার্যক্রম এই লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে আরও গবেষণা সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মৎস্য খাতকে দক্ষ, টেকসই ও বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচালিত করার কাজ অব্যাহত থাকবে।

MAH – 12909 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button