ফিলিস্তিন ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার শীঘ্রই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সিদ্ধান্তটি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আগে ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে। যুক্তরাজ্য ইউরোপের শক্তিধর অর্থনীতির দেশ হিসেবে এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ধাপে পরিণত করেছে।
যুক্তরাজ্যের ঘোষণা
প্রধানমন্ত্রী স্টারমার আগেও ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েল যদি গাজায় মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়নে নির্দিষ্ট শর্ত মানে না, তবে তিনি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের এই সিদ্ধান্তে মতপার্থক্য রয়েছে, কারণ ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপের বিরোধী। তবে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট
বর্তমানে গাজায় ইসরায়েলি সেনারা ব্যাপক স্থল অভিযান চালাচ্ছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান গাজার পরিস্থিতিকে সরাসরি ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, শিশুদের অনাহারে মরতে দেখা যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনও ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানাচ্ছে। তবে ইসরায়েল সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অভিযোগ নাকচ করেছে এবং তা ‘বিকৃত ও মিথ্যা’ দাবি করেছে।
যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব
যুক্তরাজ্য ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বিশ্বের শীর্ষ সাত অর্থনীতির মধ্যে একটি। ২০২৪ সালের হিসেবে, যুক্তরাজ্যের জিডিপি প্রায় ৩.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেবল রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের গুরুত্বকেও প্রভাবিত করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবে, যাতে দুই-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিরোধী হলেও, আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমবর্ধমান। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহায়তার জন্য দেশগুলোর পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আরও তীব্র করবে। একই সঙ্গে এটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাও বাড়াতে পারে।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মন্তব্য
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের জন্য কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারে। যুক্তরাজ্যকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে, তবুও মানবিক ও আন্তর্জাতিক নীতিমালার প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন,
“ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া যুক্তরাজ্যের জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। এটি মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। তবে বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক চাপ ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকবে।”
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সিদ্ধান্তটি মানবিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব দিক থেকে প্রভাব ফেলবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সিদ্ধান্তের পরবর্তী প্রভাব নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার সক্ষমতার ওপর।
এম আর এম – ১৪১২,Signalbd.com