ফ্যাক্ট চেক

হৃদয় পবিত্র করণে আল কোরআন

Advertisement

পবিত্র আল কোরআন এমন এক গ্রন্থ যা শুধু ধর্মীয় বিধানই নয়, বরং মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়। অজ্ঞতা ও অন্যায়ের অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষকে কোরআন দেখিয়েছে নৈতিকতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং হৃদয়ের পবিত্রতার পথ। তাই আল কোরআন শুধু একটি গ্রন্থ নয়, বরং হৃদয় ও আত্মাকে আলোকিত করার সর্বোচ্চ উৎস।

আল কোরআনের অনন্য বৈশিষ্ট্য

পবিত্র কোরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর সর্বজনীনতা। এটি শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে কোরআনের বাণী মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করে।

আল্লাহ তাআলা কোরআনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি এই গ্রন্থকে সুরক্ষিত রাখবেন। তাই যুগ যুগ ধরে কোরআনের অক্ষর ও অর্থ অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এটি মানব সভ্যতাকে সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠার পথে পরিচালিত করে চলেছে।

হৃদয় পরিবর্তনে কোরআনের ভূমিকা

মানুষের অন্তর সহজেই পাপ, হিংসা, অহংকার ও লোভে কলুষিত হতে পারে। কোরআনের শিক্ষা হৃদয়কে সেই অন্ধকার থেকে মুক্ত করে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, “নিশ্চয়ই এই কিতাব পথপ্রদর্শক, রহমত এবং সুসংবাদ প্রদানকারী তাদের জন্য যারা নিজেদের হৃদয় পবিত্র করে”।

অতীতে বহু সাহাবি কোরআনের আয়াত শুনে তাদের জীবন সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করেছেন। হজরত উমর (রা.) প্রথমে ইসলামের কঠিন শত্রু ছিলেন। কিন্তু কোরআনের আয়াত তার হৃদয়কে এমনভাবে আলোড়িত করেছিল যে তিনি হয়ে ওঠেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। এটি কোরআনের সেই অলৌকিক প্রভাব যা কঠিন হৃদয়কেও কোমল করে ফেলে।

মানবাধিকার ও সমতার শিক্ষা

কোরআন শুধু আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা দেয় না, বরং মানুষের মৌলিক অধিকারকেও প্রতিষ্ঠা করে। নারী-পুরুষের সমান অধিকার, ন্যায়বিচার, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা—এসবই কোরআনের শিক্ষার অংশ।

ইসলামের পূর্বে আরব সমাজে নারীদের কোনো অধিকার ছিল না। কোরআন নারীদের উত্তরাধিকার, সম্মান এবং সামাজিক মর্যাদা প্রদান করেছে। আল্লাহ বলেন, “যে পুরুষ বা নারী ঈমানদার হয়ে সৎকর্ম করে, তার প্রতিদান জান্নাত“। এই ঘোষণা ইতিহাসের প্রথম ও অনন্য নজির।

সহনশীলতা ও শান্তির বার্তা

কোরআন আমাদের শিখিয়েছে পারস্পরিক সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ। অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ কোরআনের শিক্ষা। মহানবী (সা.) যখন মদিনায় গেলেন, তিনি ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলমান সবার অধিকার নিশ্চিত করে “মদিনা সনদ” প্রণয়ন করেছিলেন। এটি ছিল কোরআনের শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগ।

আজও কোরআনের শিক্ষা অনুসরণ করলে বিশ্ব সমাজে শান্তি ও পারস্পরিক সম্মান প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ মানদণ্ড

কোরআন ঘোষণা দিয়েছে: “কোনো জাতির প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদের ন্যায়বিচার থেকে বিরত না রাখে। তোমরা সুবিচার কর, কারণ সুবিচার তাকওয়ার কাছাকাছি”। এই আয়াত দেখায়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় পক্ষপাত বা বৈষম্যের কোনো স্থান নেই।

এই শিক্ষা কেবল মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সকল মানুষের জন্যই একটি মৌলিক নীতি। ন্যায়বিচারের এই দিকনির্দেশনা বর্তমান পৃথিবীর যেকোনো মানবাধিকার আইন থেকেও শ্রেষ্ঠ।

কোরআনের শিক্ষা আজও প্রাসঙ্গিক

১৪০০ বছর আগে অবতীর্ণ কোরআন আজও সমানভাবে কার্যকর। আধুনিক বিশ্বে যেখানে অশান্তি, হিংসা ও বৈষম্য বেড়ে চলেছে, সেখানে কোরআনের শিক্ষা হতে পারে স্থায়ী সমাধান। হৃদয়ের পবিত্রতা থেকে শুরু করে সামাজিক ন্যায়বিচার—সবকিছুর দিকনির্দেশনা কোরআনে বিদ্যমান।

কোরআনের বাণী আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একজন মানুষ যদি নিজের অন্তরকে শুদ্ধ করে নিতে পারে, তবে সমাজও আলোকিত হবে।

আল কোরআন মানুষের হৃদয় পবিত্র করার জন্যই আল্লাহর পাঠানো সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা। এটি শুধু একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং জীবন গঠনের পূর্ণাঙ্গ নীতি। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—সবক্ষেত্রে কোরআনের শিক্ষা বাস্তবায়ন করলে পৃথিবী হবে শান্তি, ন্যায় ও আলোর রাজ্য। আল্লাহ আমাদেরকে কোরআনের আলোয় জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন। আমিন।

এম আর এম – ১৩৮৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button