৭ দফা দাবিতে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

রাজধানী ঢাকা শহরের ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে বুধবার সকাল থেকেই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। শিক্ষার্থীরা তাদের সাত দফা দাবি পূরণের জন্য এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সকাল ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা মূল সড়কটি বন্ধ করে দেন, যার ফলে তেজগাঁওসহ আশেপাশের এলাকায় সকাল থেকেই ব্যাপক যানজট তৈরি হয়।
পেশাদার ও জনজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক বন্ধ থাকায় অফিসগামী মানুষ, ব্যবসায়ী ও যাত্রীদের ভোগান্তি বৃদ্ধি পায়। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে এবং স্লোগান প্রদানের মাধ্যমে তাদের দাবিগুলো সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন।
শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবি:
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো উপস্থাপন করেছেন, তা মূলত তাদের পেশাগত ও শিক্ষাগত উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রধান দাবিগুলো হলো:
- উপসহকারি প্রকৌশলী থেকে সহকারি প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির হার বৃদ্ধি
- সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সমানুপাতিক নিয়োগ নিশ্চিত করা
- জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল
- ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতির রায় বাতিল করা
- ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন করা
- ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল করা এবং নিয়োগবিধি সংশোধন করা
- শিক্ষার্থীদের চাকরি নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ
শিক্ষার্থীরা জানান, যদি তাদের দাবিগুলো সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত গ্রহণযোগ্য সমাধান না হয়, তবে তারা আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিতে পারেন।
বিক্ষোভ ও যানজট পরিস্থিতি:
শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান শুরু করেন। সকাল ১১টার পর তারা প্রধান সড়ক অবরোধ করলে ঢাকার বিভিন্ন অংশে যানজট তৈরি হয়। এতে অফিসগামী মানুষ এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বৃদ্ধি পায়।
এর আগে, মঙ্গলবারও শিক্ষার্থীরা সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নেন। প্রায় আধঘণ্টা অবস্থানের পর তারা ক্যাম্পাসের দিকে ফিরে যান। তবে এই সময়ও তারা তাদের দাবিগুলো কার্যকর করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দেশের অন্যান্য জেলায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ:
রাজধানীর তেজগাঁও ছাড়াও দেশের একাধিক জেলায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। বুধবার গাজীপুরে সড়ক অবরোধ, দিনাজপুরে সড়ক ও রেলপথ বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা সরকারকে তাদের দাবিগুলো পূরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন মূলত পেশাগত ও শিক্ষাগত ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য। তারা জানান, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা দেশে উন্নতমানের ইঞ্জিনিয়ার এবং দক্ষ প্রযুক্তিবিদ হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। সঠিক পদোন্নতি, চাকরিতে সমান সুযোগ ও নিয়োগ নীতির উন্নয়ন তাদের প্রাপ্য।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের দাবি এবং সরকারের ভূমিকা:
দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। একদিকে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষতা অর্জন করে চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। অন্যদিকে, সরকারি নিয়োগ নীতি ও পদোন্নতি সংক্রান্ত নিয়মাবলী তাদের জন্য প্রায়শই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, সরকারি পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও স্বচ্ছ ও সমান হওয়া উচিত। বিশেষত, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি, নিয়োগ ও পদবি সংশোধনের বিষয়গুলো তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য:
শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি মানা হলে ভবিষ্যতে পেশাগত ও শিক্ষাগত ক্ষেত্রে আমাদের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। তবে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হব।”
পরিস্থিতি ও প্রত্যাশিত সমাধান:
সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মনোযোগ সহকারে দেখা হচ্ছে এবং নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতির পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রযুক্তি খাতে নতুন ধারা সৃষ্টি হবে।
এছাড়াও, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেশের অন্যান্য প্রযুক্তি ও শিক্ষাক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। শিক্ষার্থীদের এই ধরনের সমন্বিত আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
সমন্বিত তথ্য ও বিশ্লেষণ:
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুধুমাত্র রাজধানী বা নির্দিষ্ট জেলায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি জাতীয় আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা দেশব্যাপী সমন্বিতভাবে দাবি আদায়ের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন যদি সফল হয়, তবে তা দেশের প্রযুক্তি শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু নিজেরা নয়, ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্যও ন্যায্য শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করা।”
শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সমাধান না আসে, তবে আন্দোলন আরও দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো সময়মতো পূরণ করা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সংক্ষেপে:
- তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ৭ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে।
- দাবিগুলো মূলত পদোন্নতি, নিয়োগ নীতি এবং চাকরির নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।
- শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন জেলায়ও সড়ক ও রেলপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেছেন।
- শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেশের প্রযুক্তি শিক্ষার মান উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
- সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং সমাধানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।
এই আন্দোলন দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে।
MAH – 12863 Signalbd.com