সিঙ্গাপুরে চীনা ধনীদের আগ্রহ কমছে: কারণ ও প্রভাব

একসময়কার নিরাপদ আশ্রয়স্থল সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুর একসময় চীনের ধনী পরিবারগুলোর জন্য ছিল একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, মান্দারিন ভাষার প্রচলন, এবং পরিবারভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গঠনে সহায়ক নীতির কারণে সিঙ্গাপুর চীনা ধনীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিঙ্গাপুরের প্রতি চীনা ধনীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
ফুজিয়ান কেলেঙ্কারি ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ
২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরে ‘ফুজিয়ান কেলেঙ্কারি’ নামে একটি অর্থ পাচার কেলেঙ্কারি সামনে আসে, যার ফলে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যাংকগুলো কঠোর পদক্ষেপ নেয়। নতুন নিয়মকানুন চালু করা হয়, যার ফলে ধনী চীনা নাগরিকদের ফ্যামিলি অফিস বা স্থায়ী আবাসন স্থাপনের আবেদন প্রায় ৫০% কমে যায়। বিশেষ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি কমেছে।
২০২৫ সালের নতুন বিধান ও তার প্রভাব
২০২৫ সালে সিঙ্গাপুরে নতুন বিধান চালু করা হয়, যার আওতায় ক্রিপ্টোকারেন্সি, স্টেবলকয়েন বা টোকেনাইজড ইকুইটি জাতীয় পণ্য বিদেশি গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করতে হলে প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স নিতে হয়। এই লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কমপক্ষে আড়াই লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার মূলধন থাকতে হয় এবং অর্থ পাচারসংক্রান্ত কঠোর আইন ও প্রযুক্তিগত ঝুঁকিবিষয়ক নীতি মানতে হয়। এই নতুন বিধানগুলোর কারণে অনেক ধনী চীনা নাগরিক সিঙ্গাপুর ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন।
হংকং ও দুবাইয়ের প্রতি তরুণ ধনীদের আকর্ষণ
সিঙ্গাপুরের কঠোর নিয়মকানুন ও বাড়তি তদারকির কারণে তরুণ ধনীরা এখন হংকং ও দুবাইয়ের দিকে ঝুঁকছেন। হংকংয়ে করছাড়সহ নানা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, যা ধনী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। অন্যদিকে, দুবাইয়ের জীবনধারা ও ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধাও তরুণ ধনীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
সিঙ্গাপুরের ভবিষ্যৎ
সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, অর্থ পাচারের ঘটনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ নীতির মানদণ্ড পাল্টায়নি। তবে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মকানুনের কারণে সিঙ্গাপুরের প্রতি ধনী চীনা নাগরিকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সিঙ্গাপুরে ধনীদের অভিবাসনের হার অর্ধেকে নেমে আসবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর মাত্র ১ হাজার ৬০০ জন মিলিয়নিয়ার সিঙ্গাপুরে যাবেন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় অনেক কম।
সিঙ্গাপুর একসময় চীনা ধনীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য ছিল, তবে নতুন নিয়মকানুন ও কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সিঙ্গাপুরের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। হংকং ও দুবাইয়ের মতো অন্যান্য শহরগুলো এখন ধনী চীনা নাগরিকদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। সিঙ্গাপুরকে তার অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের নিয়মকানুন প্রণয়ন করতে হবে।
MAH – 12827 Signalbd.com