বিশ্ব

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান ফ্রান্সসহ পশ্চিমা ১৫ দেশের

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি একযোগে আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্সসহ পশ্চিমা ১৫টি দেশ। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। এই সম্মেলনে গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান ও দীর্ঘদিনের ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট সমাধানে নতুন উদ্যোগের সূচনা করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

নিউইয়র্ক সম্মেলন: যৌথ বিবৃতির মূল বার্তা

মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত সম্মেলন শেষে যৌথভাবে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, যারা এখনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের উচিত দ্রুত এই স্বীকৃতি দেওয়া। ফ্রান্সের নেতৃত্বে আয়োজিত এই সম্মেলনে সৌদি আরব, স্পেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ডসহ ১৫ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেন।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানান, “আমরা একসঙ্গে বার্তা দিচ্ছি — ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি বিশ্ব শান্তির জন্য জরুরি। যারা এখনও স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের প্রতি আহ্বান জানাই এই সিদ্ধান্তে অংশ নিতে।”

ফ্রান্সের অবস্থান ও সাম্প্রতিক ঘোষণা

গত সপ্তাহে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দেন, আগামী সেপ্টেম্বরে তার দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এই ঘোষণার পর ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। তবে ফরাসি সরকার জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ শান্তি প্রক্রিয়াকে গতি দেবে এবং সমাধানের একটি গঠনমূলক পথ তৈরি করবে।

যুক্তরাজ্যের সতর্ক বার্তা

সম্মেলনের দিনই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সতর্ক করে বলেছেন, যদি সেপ্টেম্বরের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং অন্যান্য মানবিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে যুক্তরাজ্যও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে। বাস্তবায়িত হলে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য হবে প্রথম জি-৭ দেশ, যারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।

কোন কোন দেশ এই আহ্বানের সাথে যুক্ত

যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে ফ্রান্স, সৌদি আরব, স্পেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ডসহ মোট ১৫টি দেশ। তাদের মধ্যে অন্তত ৯টি দেশ এখনও ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তারা জানিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তারা ইতিবাচক বিবেচনা করছে। এই তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দেশও।

সম্মেলনের পটভূমি

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত কয়েক দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির বড় ইস্যু। বহুবার আলোচনার পরও কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি। দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে ফেরার জন্যই ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা হামাসের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন অস্ত্র ত্যাগ করে এবং গাজায় তাদের শাসন অবসান ঘটায়। পাশাপাশি, মানবিক পরিস্থিতি দ্রুত উন্নত করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি: শান্তির পথে নতুন দিক

বৈশ্বিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পশ্চিমা বিশ্বের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ভাঙার একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আরও দেশ ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে যোগ দেয়, তবে ইসরায়েলকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনা সহজ হবে।

সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ

অন্যদিকে, এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। তাদের দাবি, এখনই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে শান্তি প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
তবে পশ্চিমা নেতারা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার স্বীকৃতি ছাড়া স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

নিউইয়র্ক সম্মেলন থেকে শুরু হওয়া এই নতুন উদ্যোগকে কেন্দ্র করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়ার সাফল্য নির্ভর করবে, মাঠ পর্যায়ের যুদ্ধ বন্ধ করা এবং স্থায়ী আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার ওপর।


“আমরা চাই, বিশ্ব ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে দাঁড়াক। একমাত্র এই পথেই স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে।” – ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারো

শেষ কথা 

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে ঘিরে বিশ্বে নতুন এক আলোচনার সূত্রপাত হলো। এখন দেখার বিষয়, পশ্চিমা বিশ্বের এই নতুন উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী সংকট সমাধানে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখে।

এম আর এম – ০৬০৬ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button