বাংলাদেশ

ডাকসুর প্রথম সভা শুরু: নতুন নেতৃত্বে প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তাদের কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রথম সভা শুরু করেছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরের পাশের একটি কক্ষে এই ঐতিহাসিক সভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

এই সভায় উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মহিউদ্দীন খান এবং কার্যনির্বাহী পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান সভার সভাপতিত্ব করছেন।

সভার ঘোষণা

এর আগে গতকাল শনিবার ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজকের সভার বিষয়টি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নবনির্বাচিত ডাকসু কার্যনির্বাহী পরিষদের এ সভায় গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক আলোচনা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।

ডাকসু: ঐতিহ্য ও ইতিহাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির অন্যতম প্রধান মঞ্চ। ১৯২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে এই সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

  • ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ডাকসুর নেতারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
  • ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানেও ডাকসুর আন্দোলন ছিল দিকনির্দেশক শক্তি।
  • মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা স্বাধীনতার পক্ষে সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।

তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নানা প্রেক্ষাপট এবং দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় ডাকসুর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে এই সংসদের গণতান্ত্রিক চর্চা প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ভঙ্গুর হয়ে ছিল।

সাম্প্রতিক ডাকসু নির্বাচন ও প্রত্যাশা

২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পর তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছে। এ কারণে এই নির্বাচনকে “গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গনের প্রত্যাবর্তন” হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

মূল পদগুলোতে নির্বাচিতরা:

  • ভিপি: সাদিক কায়েম
  • জিএস: এস এম ফরহাদ
  • এজিএস: মহিউদ্দীন খান

নতুন এই নেতৃত্ব শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও চাহিদাকে এগিয়ে নেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রথম সভার মূল আলোচ্য বিষয়

আজকের সভায় যে বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে বলে জানা গেছে:

  1. ডাকসুর সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করা
  2. শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা – যেমন আবাসন, লাইব্রেরি সুবিধা, টিউশন ফি সংক্রান্ত সমস্যা
  3. শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা রোধ
  4. সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম পুনরুজ্জীবন
  5. বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলন

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ডাকসু যেন কেবল রাজনৈতিক মঞ্চে সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করে। আবাসিক হলের অব্যবস্থাপনা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণা সহায়তা, সাশ্রয়ী ক্যান্টিন ও আধুনিক লাইব্রেরি সুবিধা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি।

একজন শিক্ষার্থী বলেন,
“আমরা চাই ডাকসু আমাদের বাস্তব সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করুক। শুধু রাজনৈতিক স্লোগান নয়, বরং পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য সহায়ক পদক্ষেপ নিক।”

শিক্ষক সমাজের মতামত

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক অধ্যাপক মনে করেন, ডাকসুর সক্রিয় কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে। শিক্ষকরা আশা করছেন, নতুন নেতৃত্ব শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ রাজনীতি ও মুক্ত চিন্তার পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন,
“ডাকসুর প্রথম সভা শুরু হওয়া একটি ইতিবাচক বার্তা। আমরা চাই এটি শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমিত না থেকে বাস্তব পদক্ষেপে রূপ নিক।”

চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা

ডাকসুর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করা। অতীতে দেখা গেছে, বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই ডাকসুর কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করেছে। ফলে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের প্রকৃত স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে।

এছাড়া শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধ করাও ডাকসুর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি ডাকসু শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নে আন্তরিক ভূমিকা পালন করে, তবে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক রাজনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কিছু সম্ভাব্য উদ্যোগ:

  • ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শিক্ষার্থীদের মতামত সংগ্রহ
  • শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ কার্যক্রম
  • শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত ক্যালেন্ডার নিশ্চিতকরণ
  • আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রম

ডাকসুর প্রথম সভা শুরু হওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা আবারও তাদের প্রতিনিধিদের সরাসরি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ পাচ্ছেন।

সবারই প্রত্যাশা—ডাকসু যেন সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে, বিশ্ববিদ্যালয়কে গণতান্ত্রিক চর্চার মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর শিক্ষাঙ্গন গড়ে তোলে।

MAH – 12796  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button