বিশ্ব

গাজা যুদ্ধে চূড়ান্ত সমাপ্তি আসছে: ট্রাম্পের তিন সপ্তাহের ভবিষ্যদ্বাণী

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধে চূড়ান্ত সমাপ্তির আশ্বাস দিয়েছেন। সোমবার (২৫ আগস্ট) তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এই সংঘাত শেষ হবে। এ খবর সম্প্রচার করেছে আল জাজিরা।

ট্রাম্প আরও বলেছেন, “এ যুদ্ধ শেষ হওয়াটা জরুরি, কারণ গাজার মানুষরা এখন ক্ষুধা, স্বাস্থ্য সংকট, এবং মারাত্মক প্রাণহানির সম্মুখীন। এটি আর বহাল রাখা যায় না।”

ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রেক্ষাপট

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য এসেছে এমন সময়ে যখন ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। সাম্প্রতিক এক ঘটনা অনুযায়ী, গাজার নাসের হাসপাতাল লক্ষ্য করে হামলায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৬ জন সাংবাদিকও রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়টার্স এবং আল জাজিরার সাংবাদিকরা অন্তর্ভুক্ত।

ট্রাম্পের এই ভবিষ্যদ্বাণী আসছে এমন এক সময়ে যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর গাজার দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী প্রশাসন বহুবার যুদ্ধ সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। বরং, ইসরায়েলকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করে এবং ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

গাজা যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি

২০২৫ সালের এই গাজা যুদ্ধ একটি গভীর মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী:

  • প্রায় ৩০০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
  • গাজার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
  • খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাব তীব্র।
  • শিশু ও নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলি হামলা ও হ্যামাসের প্রতিরোধের সংঘাত এর ফলাফল একদিকে যেমন নিরস্ত্র নাগরিকদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে গেছে, তেমনি মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করেছে।

মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা

ট্রাম্প প্রশাসন এবং তার পূর্বসূরীরা ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে:

  • কয়েক বিলিয়ন ডলারের হালকা ও ভারী অস্ত্র সরবরাহ
  • গাজার মানবিক সাহায্য সীমিত করা
  • ফিলিস্তিনকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকা।

এ ধরনের নীতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচিত হলেও ট্রাম্প দাবি করছেন, “আমরা এখন এমন একটি সময়ে পৌঁছেছি যেখানে যুদ্ধকে শেষ করার বিকল্প নেই।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

গাজার উপর ইসরায়েলি হামলার পর বিশ্বব্যাপী মহাসমালোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার, জাতিসংঘ, এবং মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

  • জাতিসংঘ সাধারণ সম্পাদক বলেছে, “গাজার পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়। অবিলম্বে শান্তি স্থাপন করা উচিত।”
  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, “নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া কোন সামরিক অভিযান গ্রহণযোগ্য নয়।”
  • পশ্চিমা গণমাধ্যম ও সাংবাদিকগণ ব্যাপক রিপোর্ট করেছে, যেসব রিপোর্টই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সচেতন করেছে।

এদিকে, ট্রাম্পের তিন সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধ শেষের পূর্বাভাস নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে।

গাজার মানবিক সংকট

গাজায় যুদ্ধের ফলে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা এভাবে চিত্রিত করা যায়:

  • প্রায় ৫০% মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না।
  • হাসপাতালগুলোতে ওষুধের অভাব
  • বিদ্যুৎ, পানি ও পরিষ্কার পানির অভাব।
  • শিশু ও বয়স্কদের উপর স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাপক।

এ অবস্থায় ট্রাম্পের মন্তব্যের মধ্যে আশার আলো দেখছেন কিছু স্থানীয় মানুষ। তবে অনেকে বলছেন, “কেবল প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়, বাস্তব পদক্ষেপ চাই।”

গাজা যুদ্ধের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট

গাজার সংঘাত নতুন নয়। ১৯৪৮ সালের ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই অঞ্চল দীর্ঘদিন যুদ্ধের সীমানায় আছে।

  • ১৯৪৮: ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা ও ফিলিস্তিনের প্রত্যাশিত রাষ্ট্রভঙ্গ।
  • ১৯৬৭: ছয় দিনের যুদ্ধ এবং পশ্চিম তীর ও গাজার অধিকারে ইসরায়েল।
  • ২০০৭: হ্যামাস ক্ষমতায় আসে।
  • ২০২৫: সাম্প্রতিক হামলা ও প্রতিরোধ, বড় শহর ও হাসপাতাল লক্ষ্যবস্তু।

প্রতিটি ধাপেই মানুষের মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি এবং মানবিক সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে।

ট্রাম্পের মন্তব্যের সম্ভাব্য প্রভাব

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী:

  • রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পাবে ইসরায়েল ও হ্যামাসের ওপর।
  • আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আরও বেশি মানবিক সাহায্যের দিকে ঘুরবে।
  • যদি বাস্তবায়িত হয়, তিন সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধ সমাপ্তি একটি বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য হবে।

তবে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, যুদ্ধ দ্রুত শেষ হলেও মানবিক পুনর্বাসন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

গাজা যুদ্ধ: এক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি

গাজার সাধারণ মানুষরা প্রতিদিন বাঁচার লড়াই করছে। শিশুদের স্কুল বন্ধ, পরিবার ভাঙা, স্বাস্থ্যসেবা সংকটে।

  • স্কুল ও হাসপাতাল ধ্বংসের ফলে শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে প্রভাবিত
  • মহিলাদের জীবনে অসাধারণ চাপ ও ঝুঁকি
  • খাদ্য সংকট এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে।

এ অবস্থায় ট্রাম্পের মন্তব্য কিছুটা আশা জাগাচ্ছে। তবে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখলে, মানবিক পুনর্বাসন, নিরাপত্তা ও স্থায়ী শান্তি প্রয়োজন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় গাজা যুদ্ধ চূড়ান্ত সমাপ্তির আশার আলো ফুটেছে। আগামী তিন সপ্তাহে যুদ্ধ শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষজ্ঞরা, এবং স্থানীয় মানুষরা সতর্ক করে বলছেন যে, শান্তি শুধুমাত্র যুদ্ধ সমাপ্তি নয়, এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া যার মধ্যে মানবিক সাহায্য, পুনর্বাসন ও কূটনৈতিক সমাধান অন্তর্ভুক্ত।

গাজার মানুষের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি হলো খাদ্য, পানি, চিকিৎসা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যা ট্রাম্পের ঘোষণা বাস্তবে কিভাবে পরিণত হবে তা দেখার বিষয়।

MAH – 12488 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button