নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো মসজিদে গেলেন মেয়র প্রার্থী কুমো, কী বলছেন মুসলিমরা

নিউইয়র্ক নগরের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এবং সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো গতকাল শুক্রবার প্রথমবারের মতো একটি মসজিদে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। ব্রঙ্কসের ফুতা ইসলামিক সেন্টারে এই ভিজিট ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাঁর সরাসরি সংযোগ স্থাপনের প্রথম সুযোগ। মুসলিম সম্প্রদায় এবং স্থানীয় নেতারা কুমোর এই আগমনকে মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় গ্রহণ করেছেন।
কুমোর মসজিদে আগমন ও প্রতিক্রিয়া
কুমো মসজিদের নেতাদের সঙ্গে উষ্ণ পরিচিতিমূলক আলাপ-আলোচনা শেষে ছোট্ট একটি নোটকার্ডের দিকে তাকিয়ে আরবি ভাষায় ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার চেষ্টা করেন। প্রথম কয়েকবারে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকলেও তিনি শেষ পর্যন্ত সালাম জানান।
মসজিদে উপস্থিত মুসলিমরা খানিকটা বিস্মিত হলেও কুমোর আগমনকে স্বাগত জানান। উপস্থিত কয়েকজন বলেন, এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, যদিও নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কৌশল হিসাবেও দেখা যেতে পারে।
কুমোর বক্তব্য ও নির্বাচনী পরিকল্পনা
কুমো তাঁর বক্তৃতায় নিউইয়র্ককে নতুন আসা অভিবাসীদের জন্য সুযোগের শহর হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তাঁর পরিবারের ইতালীয় অভিবাসন এবং মসজিদের মুসলিম অভিবাসীদের যাত্রার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। নির্বাচিত হলে তিনি নিশ্চিত করবেন যে মুসলিমরা শহরে এসে যে সাফল্যের স্বপ্ন দেখেছেন, তা বাস্তবে রূপ পাবে।
তিনি উল্লেখ করেন, বছরে ৫০ হাজার ডলারের কম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য বাস এবং সাবওয়ে সুবিধা বিনামূল্যে হবে এবং বাসাভাড়া কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া মধ্যবিত্ত ও কর্মজীবী পরিবারের অর্থনৈতিক চাপ কমানো তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকারের অংশ।
মুসলিম সম্প্রদায়ের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ফুতা ইসলামিক সেন্টারের নেতা মামাদু দিয়ালো বলেন, প্রার্থীদের মসজিদে আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কুমো নির্বাচিত হলে মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্বেগ, যেমন আবাসন ব্যয় ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন।
তবে উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি, বিশেষ করে যুব সমাজ, কুমোর এই আগমনকে নির্বাচনী কৌশল হিসাবেই দেখেছেন। তারা মনে করছেন, নতুন চিন্তাভাবনার রাজনীতিক দরকার এবং কুমোর সময় শেষ হয়েছে।
গিনি থেকে আসা ৬০ বছর বয়সী নিরাপত্তাকর্মী বুবাকার সওলামুগম কুমোর সাবেক গভর্নর হিসেবে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
কুমোর পূর্ববর্তী সমালোচনা ও ভুল বোঝাবুঝি
কুমোর নির্বাচনী প্রচারের আগে কয়েকজন ইমামের নাম ভুলবশত সমর্থক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। কুমোর মুখপাত্র বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং বিভ্রান্তির কারণ দুই কর্মীর মধ্যে যোগাযোগজনিত ভুল হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
ইমাম মুহাম্মদ সিদ্দিকি এবং ইমাম আহমেদ আলি জানিয়েছেন, তারা সরাসরি কুমোর দলের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি এবং তাই সমর্থন জানাননি। এ ধরনের ভুল বোঝাবুঝি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে।
প্রাইমারি নির্বাচন ও কুমোর প্রতিদ্বন্দ্বীরা
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কুমো ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। জোহরান মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে নিয়মিত উপস্থিতি রাখছেন এবং মসজিদে আগমন ঘটিয়েছেন। কুমোর মসজিদে ভিজিট মূলত নির্বাচনী প্রচারের নতুন কৌশল হিসেবে মূল্যায়িত হচ্ছে।
কুমো বলেন, তিনি সব সম্প্রদায়ের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবেন। তবে নির্বাচনী প্রচারে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন আগের তুলনায় তুলনামূলকভাবে নতুন।
মুসলিম সম্প্রদায়ের আশাবাদ ও উদ্বেগ
ব্রুকলিনের আল-মদিনা মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ সিদ্দিকি আশা প্রকাশ করেছেন যে, সব প্রার্থী মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে দেখা করবেন এবং তাদের উদ্বেগ ও সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেবেন।
২০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পাকিস্তান থেকে আসা ইমাম আলি বলেন, জোহরানের উত্থান মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি মাইলফলক। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, নির্বাচনে মুসলিম ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অ্যান্ড্রু কুমোর মসজিদে প্রথমবারের মতো আগমন রাজনৈতিক এবং সামাজিক উভয় দিক থেকে গুরুত্ব বহন করছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া মিশ্র হলেও অনেকেই এটিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে কুমোর এই কৌশল মুসলিম ভোটের গুরুত্ব ও শহরের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে মুসলিম সম্প্রদায়ের মনোভাব এবং প্রার্থীদের সঙ্গে সংযোগ ভবিষ্যতের নির্বাচনী ফলাফলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
এম আর এম – ১৩২০,Signalbd.com