মিয়ানমার থেকে চমকপ্রদ খবর! চলতি বছরের ডিসেম্বরে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে জান্তা সরকার। একই সাথে দেশটির দীর্ঘদিনের জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জান্তা সরকার গঠন করলো নির্বাচন কমিশন
রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, মিয়ানমারের জান্তা সরকার ১১ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং এই কমিশনের প্রধান হিসেবে থাকবেন। যদিও এখনো নির্বাচন হওয়ার সুনির্দিষ্ট তারিখ প্রকাশ করা হয়নি, তবে ডিসেম্বরে ভোটের আয়োজনের লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করা হয়েছে।
মিন অং হ্লাইং: অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ও নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিভিশন এমআরটিভি জানিয়েছে, সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং তিনিই সরাসরি আগামী নির্বাচনের তত্ত্বাবধান করবেন। এর ফলে, দেশটিতে সামরিক শাসনের সঙ্গে রাজনৈতিক নির্বাচন পরিচালনার নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে।
জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার গুরুত্ব ও প্রভাব
মিয়ানমারে গত কয়েক বছর ধরে জরুরি অবস্থা জারি ছিল, যা সামরিক জান্তা শাসনের প্রভাবশালী সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। এখন এই জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ার মাধ্যমে দেশটিতে নাগরিক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরে আসার আশা জাগাচ্ছে।
জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিচ্ছে। যদিও মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অতীতেও উত্তেজনাপূর্ণ ছিল, এবার যে নির্বাচন হবে তার মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
মিয়ানমারের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানসহ মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সারা বিশ্বে আলোচিত হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকে দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে। এখন নির্বাচনের ঘোষণা ও জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া এই সংকট নিরসনের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমারে নির্বাচন ও জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের খবরের প্রতি গভীর মনোযোগ দিয়েছে। ইউএন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন দেশ নির্বাচনের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ আয়োজনের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশটির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথ সুগম হবে।
নির্বাচন নিয়ে মিয়ানমারের ভবিষ্যত
মিয়ানমারে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, সেটি দেশটির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটাতে পারে। ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন হলে, দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
তবে, এই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা এবং সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা মিয়ানমারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। সামরিক শাসন থেকে পূর্ণ গণতন্ত্রে রূপান্তরের এই যাত্রায় দেশের সাধারণ মানুষ বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন এবং জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের এই ঘোষণা দেশটির জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, দেশের রাজনৈতিক দল, সাধারণ জনগণ সবাই এই পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষায় আছে। মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল হবে, সেটি নির্ভর করবে আগামী নির্বাচন ও সেই নির্বাচনের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের উপর।
MAH – 12054, Signalbd.com



