আঞ্চলিক

জাকসুর ভিপি জিতু, জিএস মাজহারুল ইসলাম

Advertisement

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্যানেল সম্মিলিত জোটের প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচনের বিস্তারিত ফলাফল

জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে নয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে আব্দুর রশিদ জিতু সর্বাধিক ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। অন্যদিকে জিএস পদে আটজন প্রার্থী থাকলেও মাজহারুল ইসলাম এগিয়ে থেকে জয় নিশ্চিত করেন।

এছাড়া যুগ্ম সম্পাদক (এজিএস) পদে বিজয়ী হয়েছেন ফেরদৌস আল হাসান ও আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। দুজনই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন।

অন্য পদগুলোতে যারা জয়ী হয়েছেন:

  • পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক: তানভীর রহমান
  • খাদ্যনিরাপত্তা সম্পাদক: হুসনি মোবারক
  • সহ সমাজসেবা সম্পাদক: তৌহিদ হাসান
  • সমাজসেবা সম্পাদক: আহসান লাবিব
  • তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক: রাশেদুল ইসলাম
  • সহ ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ): মাহাদী হাসান
  • সহ ক্রীড়া সম্পাদক (নারী): ফারহানা আকতার
  • সহ সমাজসেবা সম্পাদক (নারী): নিগার সুলতানা
  • সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মহিবুল্লাহ শেখ
  • সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক: রায়হান উদ্দীন
  • সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক: জাহিদুল ইসলাম

কার্যকরী সদস্য পদে পুরুষ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ আলী চিশতী, মো. আবু তালহা ও মো. তরিকুল ইসলাম। নারী কার্যকরী সদস্য হিসেবে জয় পেয়েছেন নুসরাত জাহান ইমা, শেখ নাবিলা বিনতে হারুন এবং ফাবলিহা জাহান নাদিয়া।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও ভোটার উপস্থিতি

এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৫৯ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য।

কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মোট ১৭৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে নারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ছয়জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে আটটি পূর্ণ ও আংশিক প্যানেল।

নির্বাচন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ বিরতির পর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সারা ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন হলে প্রচারণা, পোস্টারিং ও আলোচনা-সভার মধ্য দিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আশা করছিলেন যে এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ছাত্র নেতৃত্ব গড়ে উঠবে, যারা তাদের স্বার্থ ও সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিজয়ীরা আনন্দে মেতে উঠলেও যারা হেরেছেন তাদের মাঝে হতাশার ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। অনেক শিক্ষার্থী বলেছেন, এবার যে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হয়েছে, তারা যেন সত্যিই শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করেন।

এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা চাই এই নেতৃত্ব হোক নিরপেক্ষ ও কার্যকর। রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করুক।”

বিশ্লেষকদের মন্তব্য

শিক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির একটি নতুন দিক উন্মোচন করবে। বিশেষ করে ভিপি হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয় প্রমাণ করেছে যে শিক্ষার্থীরা পরিবর্তন চান। অন্যদিকে জিএস পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীর জয় প্রমাণ করেছে যে ঐ সংগঠন এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

তাদের মতে, নির্বাচিত নেতৃত্ব যদি শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পারে, তবে জাকসু শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে।

পরিশেষে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। এবারের নির্বাচনে ভিপি হিসেবে আব্দুর রশিদ জিতু ও জিএস হিসেবে মাজহারুল ইসলামের জয় ক্যাম্পাসে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়—এই নতুন নেতৃত্ব কীভাবে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হয়।

এম আর এম – ১৩০৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button