জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা দুপুরে শেষ হলেও ফলাফল প্রকাশ করা হবে সন্ধ্যা সাতটায়। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান।
নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশেদুল আলম জানান, এবারের নির্বাচন ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়ায় কোন ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য ফলাফল প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
গণনা প্রক্রিয়া ও সময়সীমা
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে ভোট গণনার মধ্যে ১৮টিতে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩টি হলে এখনও ভোট গণনা চলছে। গণনা প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা ফল ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে এবং এ বিষয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
গত শুক্রবার নির্বাচনের পর ভোট গণনা শুরু হয় রাত সোয়া ১০টার দিকে। তবে হঠাৎ বিকেলের দিকে গণনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হয়েছে। এছাড়া গণনার কাজ দ্রুত করার জন্য পোলিং অফিসার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ
নির্বাচন চলাকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান জরুরি বৈঠক করেছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গণনা কার্যক্রমে পর্যাপ্ত জনবল যোগ করা হবে এবং রাতের মধ্যেই ফলাফল ঘোষণা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভোটারদের সুবিধার্থে ভোটপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে নির্বাচনের জটিলতা এবং অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা অনেক হওয়ায় কিছু বিলম্ব হওয়াই স্বাভাবিক বলে প্রশাসন উল্লেখ করেছে।
নির্বাচন কমিশনের সদস্য পদত্যাগ
নির্বাচনের মেলামেশায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন নির্বাচন কমিশনের এক সদস্য, অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। তিনি ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক এবং জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম জাহাঙ্গীরনগর শাখার সভাপতি।
পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হয়নি। বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম হয়েছে। আমাকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হয়েছে যাতে পদত্যাগ না করি। আমি পদত্যাগ করছি যাতে পরে যদি কোনো অনিয়মের কথা বলি, তা প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।”
প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া
ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের এজিএস প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার-এর পদত্যাগকে নির্বাচনের প্রতি আঘাত হিসেবে দেখেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, “নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে কমিশনের এই সদস্য পদত্যাগ করেছেন। তিনি যুদ্ধের ময়দান থেকে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছেন। নির্বাচনে যে হীন ষড়যন্ত্র ছিল, তা বাস্তবায়ন করতে না পারায় পদত্যাগ করেছেন।”
অন্যদিকে, বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ছাত্র সংগঠন বলছেন, নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের সময় সকল প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে এবং ভোটারদের আস্থা বজায় থাকবে।
ভোটার সংখ্যা ও অংশগ্রহণ
এইবারের জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১,৭৪৩ জন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রায় ৬৭ থেকে ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা, যারা বলছেন যে দীর্ঘ ৩৩ বছরের বিরতির পর শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভোটারদের সুবিধার্থে কেন্দ্রে পর্যাপ্ত স্টাফ এবং নিরাপত্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
অনিয়ম ও অভিযোগ
নির্বাচন চলাকালীন কিছু অভিযোগও উঠেছে। অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার এর মতো পদত্যাগীরা বলেছেন, নির্বাচনের সময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হয়নি। বিভিন্ন অনিয়ম এবং চাপের অভিযোগ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও অভিযোগ তুলেছে, ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কিছু জটিলতা দেখা গেছে। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, সব অভিযোগ যাচাই করে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচনের গুরুত্ব
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতার প্রতিফলন। দীর্ঘ ৩৩ বছরের বিরতির পর এই নির্বাচনকে শিক্ষার্থী নেতৃত্বের শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু সম্পন্ন হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব বিকাশে সহায়ক হবে। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
ফলাফল প্রকাশের প্রত্যাশা
শিক্ষার্থী এবং প্রার্থীরা এখন ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান নিশ্চিত করেছেন, গণনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা এবং উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা ফলাফল জানার জন্য মুখিয়ে আছে এবং আশাবাদী যে নির্বাচনের ফলাফল স্বচ্ছ ও ন্যায্য হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন শুধু একটি ভোটই নয়, এটি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। দীর্ঘ ৩৩ বছরের বিরতির পর এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্দীপনা এবং আশা সৃষ্টি করেছে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সতর্কতা অবলম্বন করে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। ফলাফল ঘোষণার জন্য শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা এখনও শেষ হয়নি, তবে সন্ধ্যা সাতটায় ফলাফল প্রকাশ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
MAH – 12781, Signalbd.com



