বাংলাদেশ

গণছুটিতে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা, কঠোর বার্তা জ্বালানি উপদেষ্টার

কাজের ব্যাহতিতে অস্থিরতা, সরকার প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে

ঘটনার সারসংক্ষেপ

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কঠোর বার্তা দেন। তিনি বলেন, অযৌক্তিকভাবে গণছুটি নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্রম ব্যাহত করা হবে সরকার মেনে নেবে না। প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানা গেছে, কেউ কেউ জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে গণছুটি নিচ্ছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরকার মানবে না এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পল্লী বিদ্যুতের বর্তমান পরিস্থিতি

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দেশের গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই সমিতির কর্মীরা ছুটিতে থাকায় গ্রাহকরা সমস্যার মুখে পড়ছেন। বিশেষ করে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যুতের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফাওজুল কবির খান বলেন, “পল্লী বিদ্যুৎ একটি অত্যাবশ্যকীয় সেবা। সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রুত কাজে যোগ দিতে হবে। ছুটিতে থাকলে আলোচনায় বসা সম্ভব নয়।”

উপদেষ্টা আরও জানান, যারা কাজে যোগ দিচ্ছেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তিনটি জিডি দায়ের করা হয়েছে এবং সরকার সহনশীলতা দেখালেও দুর্বলতা ভাবা ঠিক হবে না।

গত কয়েক বছরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্রমে মাঝে মাঝে বাধা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন কিংবা বড় কোনো ইভেন্টের আগে গণছুটি নেওয়া এবং কাজের ব্যাহতির ঘটনা ঘটেছে। এবারও একই ধরণের ঘটনা ধরা পড়েছে।

পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো হলে গ্রামীণ জনগণের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কৃষি কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনও প্রভাবিত হয়।

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থা

ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা হবে। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতের কেনাকাটায় দুর্নীতি অনুসন্ধানে সাবেক সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “অনেককে কাজে যোগ দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যারা এমন করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের সহনশীলতা ভুল বোঝা ঠিক হবে না।”

এছাড়া সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি মোকাবিলায় এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি, পুরোনো গ্যাস লাইন মেরামত এবং অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ চলছে।

প্রভাব ও বিশ্লেষণ

পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের গণছুটি এবং কার্যক্রমে ব্যাঘাত মূলত গ্রামীণ জনগণের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের কঠোর পদক্ষেপ কর্মীদের দায়িত্ববোধ বাড়াতে পারে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থিতিশীলতা আনবে।

অপরদিকে, বিদ্যুৎ সমিতির অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান না হলে কর্মীরা ভবিষ্যতে আবারও এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কার্যকর মনিটরিং ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যবস্থাপনা।

বিশেষজ্ঞ মতামত

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশ্লেষক ড. আহমেদ হোসেন বলেন, “পল্লী বিদ্যুৎ গ্রামীণ জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কর্মীরা ছুটি নিয়ে কাজ থামায়, তবে তা সরাসরি অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে। সরকারের কঠোর পদক্ষেপ সময়োপযোগী।”

অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞানী সুমনা রহমান মন্তব্য করেন, “কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা এবং সমঝোতা জরুরি। শুধুমাত্র কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা সমাধান নাও করতে পারে।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

সরকার পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা আনার জন্য কঠোর নজরদারি চালাবে। এ ধরনের পরিস্থিতি পুনরায় তৈরি হলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি কর্মীদের সঙ্গে পর্যাপ্ত সমঝোতার মাধ্যমে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হবে।

পরিশেষে

পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের গণছুটি এবং কার্যক্রমে ব্যাঘাত দেশের গ্রামীণ জনজীবনে প্রভাব ফেলছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন—অযৌক্তিক ছুটি মেনে নেওয়া হবে না, প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা হবে।

এবার প্রশ্ন হলো, পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা সরকারের কঠোর বার্তা মেনে কি দ্রুত কাজে যোগ দেবেন, নাকি বিষয়টি নতুন উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে?

এম আর এম – ১২৯৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button