বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আয়োজন করেছে দ্বিতীয় গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি। রাজধানীর ধানমন্ডির সোবহানবাগে ড্যাফোডিল প্লাজায় ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রায় ৪০০ জন ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সাফল্যকে স্বীকৃতি দিতে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এবারের গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে মেধাতালিকায় সেরা ১৫ জন শিক্ষার্থীকে গোল্ড মেডেল, ৩ জনকে চেয়ারম্যান অ্যাওয়ার্ড, এবং ২ জনকে সফল অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এই স্বীকৃতি শিক্ষার্থীদের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেন।
প্রধান অতিথির উদ্বুদ্ধকরণ বক্তব্য
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থনৈতিক রূপান্তরের জন্য দক্ষতা ত্বরান্বিত এবং শক্তিশালীকরণ (ASSET) প্রকল্পের পরিচালক মীর জাহিদ হাসান। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন:
“এখন আপনারা যে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেছেন, তা দেশের উন্নয়ন ও সমাজের কল্যাণে কাজে লাগানোর সময় এসেছে। আপনারা যদি অর্জিত জ্ঞানকে সমাজ ও দেশের কাজে না লাগান, তবে এটি হবে একটি বড় ব্যর্থতা এবং অপচয়। আপনারা আজ প্রতিজ্ঞা করুন যে, যা শিখেছেন, তার বহুগুণ দেশকে ফিরিয়ে দেবেন এবং নতুন বাংলাদেশ গঠনে অবদান রাখবেন।”
এই বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মাঝে দায়িত্ববোধ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছে।
প্রতিষ্ঠানের ভিশন এবং ডিজিটাল রূপান্তর
ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন:
“ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষায় উদ্ভাবনকে প্রধান অনুঘটক হিসেবে নিয়েছে। আমাদের একাডেমিক সিস্টেম সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন বাস্তবমুখী শিক্ষা পায়, সেই লক্ষ্যে আমরা আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার সুযোগ তৈরি করেছি। ভবিষ্যতেও আমরা আরও উন্নত ফ্ল্যাগশিপ ইনস্টিটিউট হিসেবে এগিয়ে যেতে চাই।”
এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দেশের কারিগরি শিক্ষায় ডিজিটালাইজেশন এবং ইন্ডাস্ট্রি-বেসড স্কিল ডেভেলপমেন্ট-এর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিলেন
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন:
- বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রুহুল আমিন
- বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব আল মাসুদ করিম
- ড্যাফোডিল পরিবারের স্কিলস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট ইকোসিস্টেমের নির্বাহী পরিচালক কে এম হাসান রিপন
- ড্যাফোডিল পরিবারের বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ইনস্টিটিউশনসমূহের নির্বাহী পরিচালক রথীন্দ্র নাথ দাস
তাঁদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে আরও মর্যাদাপূর্ণ করেছে।
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সম্পর্কে কিছু তথ্য
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
- প্রতিষ্ঠাকাল: ২০০৬
- অবস্থান: ধানমন্ডি, ঢাকা
- প্রধান কোর্সসমূহ: কম্পিউটার টেকনোলজি, ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি, সিভিল টেকনোলজি, টেলিকমিউনিকেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ই-কমার্স প্রভৃতি।
- শিক্ষার্থীর সংখ্যা: ১০,০০০+
- অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক: দেশের বিভিন্ন শিল্পে কর্মরত দক্ষ প্রকৌশলী
এই প্রতিষ্ঠান আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা ও ডিজিটাল ক্লাসরুম, অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, এবং ইন্ডাস্ট্রি লিঙ্কড প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশে ডিপ্লোমা শিক্ষার গুরুত্ব
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কারিগরি শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে দেশের শিল্পখাত ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দ্রুত বিকাশের কারণে দক্ষ জনবল তৈরির প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
- সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৫ কোটির বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে, যার বড় অংশই টেকনিক্যাল স্কিল ভিত্তিক।
- ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, ম্যানুফ্যাকচারিং, আইটি সেক্টরসহ নানা খাতে অবদান রাখছে।
ড্যাফোডিল পলিটেকনিকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই দক্ষতা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
সফল অ্যালামনাইয়ের গল্প: অনুপ্রেরণা সবার জন্য
অনুষ্ঠানে যেসব শিক্ষার্থী সফল অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, তাঁরা বর্তমানে দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত। কেউ কেউ আবার উদ্যোক্তা হিসেবে নিজস্ব ব্যবসা গড়ে তুলেছেন।
এটি প্রমাণ করে যে, কারিগরি শিক্ষা শুধু চাকরির পথ নয়, বরং উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগও তৈরি করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের শুধু শিক্ষা দিয়েই থেমে থাকছে না, বরং তাঁদের জব প্লেসমেন্ট এবং উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ দিতেও কাজ করছে।
- ক্যারিয়ার গাইডলাইন সেমিনার
- ইন্ডাস্ট্রি ইন্টার্নশিপ
- বিদেশে চাকরির সুযোগ তৈরি
- আইটি ও সফটওয়্যার সেক্টরে বিশেষায়িত কোর্স
সব মিলিয়ে, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা থেকে কর্মসংস্থানের পূর্ণাঙ্গ সেতুবন্ধন তৈরি করছে।
ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি দেশের কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রতিশ্রুতির প্রতীক।
মেধাবী শিক্ষার্থীদের অ্যাওয়ার্ড প্রদান তাদের উৎসাহিত করবে আরও বড় সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ, আর সেই দক্ষতা অর্জনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
MAH – 12725, Signalbd.com



