বাংলাদেশ

ডাকসু নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই

Advertisement

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি জোরদার হলেও, এরই মধ্যে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ভাইরাল হয় যে, এই নির্বাচনে সেনাবাহিনী কোনোভাবে জড়িত থাকবে বা প্রভাব বিস্তার করবে।

তবে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, এই খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, “ডাকসু নির্বাচনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসে না।”

সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল ঘোষণা কী বলছে?

ফেসবুক পোস্টে বলা হয়,

“একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ক্রমাগত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টের অপচেষ্টা মাত্র। এসব অপপ্রচার নির্বাচনী পরিবেশকে নষ্ট করতে পারে।”

সেনাবাহিনী স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, তারা আশা করে ডাকসু নির্বাচন গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে এবং ভবিষ্যতের জাতীয় নির্বাচনগুলোর জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

গুজব ছড়ানোর পেছনের কারণ কী হতে পারে?

নির্বাচনকালীন সময়ে বাংলাদেশে গুজব ছড়ানোর প্রবণতা নতুন নয়। বিশেষ করে বড় কোনো নির্বাচন সামনে এলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা বিভ্রান্তি তৈরি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অপপ্রচারের মূল লক্ষ্য হলো জনমনে অস্থিরতা সৃষ্টি করা এবং নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করা

ডাকসু নির্বাচনের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালের ১১ মার্চ। তার আগে প্রায় ২৮ বছর ধরে এই নির্বাচন বন্ধ ছিল।

ডাকসুর ইতিহাসে দেখা যায়, এ সংসদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অনেক বড় রাজনৈতিক নেতা ডাকসু থেকে উঠে এসেছেন। তাই ডাকসু নির্বাচন শুধু একটি ছাত্রসংগঠনের ভোট নয়, বরং এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ

কেন এই নির্বাচন নিয়ে এত আলোচনা?

বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা নতুন কিছু নয়। অনেক সময় এসব নির্বাচনে হিংসা, বিশৃঙ্খলা এবং প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে। তাই সেনাবাহিনীকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়।

সেনাবাহিনীর বার্তা: শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বান

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের বার্তায় শুধু গুজব উড়িয়ে দেননি, বরং সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করেছেন। সেনাবাহিনী আশা প্রকাশ করেছে যে, এই নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে এবং একটি উদাহরণ স্থাপন করবে

বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গুজবের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর এই দ্রুত প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। কারণ গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় এবং অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। তারা বলছেন,

  • গণতান্ত্রিক চর্চা বজায় রাখতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়া জরুরি।
  • অপপ্রচার রোধে প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে।
  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য যাচাই না করে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ডিজিটাল গুজব নিয়ন্ত্রণে করণীয়

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবরের প্রসার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে রাজনৈতিক বা নির্বাচনী সময়ে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তাই করণীয় বিষয়গুলো হলো:
সচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণকে তথ্য যাচাইয়ের বিষয়ে সচেতন করতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং: ভুয়া খবর ছড়ানো পেজ ও গ্রুপ শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গুজব বিরোধী ক্যাম্পেইন: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারি সংস্থার উদ্যোগে গুজব প্রতিরোধী ক্যাম্পেইন চালাতে হবে।

ডাকসু নির্বাচন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং পুরো দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেনাবাহিনীর এই স্পষ্ট ঘোষণা গুজবের বিরুদ্ধে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। এখন প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থী সংগঠন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টা যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়

আপনার মতামত জানান

আপনি কি মনে করেন ডাকসু নির্বাচন গণতান্ত্রিক চর্চা শক্তিশালী করতে পারবে? আপনার মতামত কমেন্টে জানান।

MAH – 12690,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button