বিশ্ব

ট্রাম্পের গাজা খালি করার প্রস্তাব: মিসর, জর্ডান ও হামাসের দৃঢ় প্রত্যাখ্যান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি প্রস্তাব করেছেন যে, ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের মিসর ও জর্ডানে আশ্রয় দেওয়া উচিত। তবে এই প্রস্তাব মিসর, জর্ডান এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস কর্তৃক দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের যেকোনো স্থানচ্যুতি সম্পর্কে তাঁর দেশের ‘দৃঢ় ও অটল’ অবস্থান রয়েছে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একই মনোভাব প্রকাশ করে জানায়, ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে স্থানচ্যুতি মিসর স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে, তা স্বল্পমেয়াদী হোক বা দীর্ঘমেয়াদী।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম রয়টার্সকে বলেন, ফিলিস্তিনিরা এমন কোনো প্রস্তাব বা সমাধান মেনে নেবে না, এমনকি যদি পুনর্গঠনের মতো ভালো উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়, তবুও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। হামাসের আরেক কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেনের ‘ব্যর্থ’ ধারণাগুলোর পুনরাবৃত্তি না করার অনুরোধ করেছেন।

ফিলিস্তিনের পশ্চিমা-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমাদের মানুষেরা অবিচল থাকবে এবং মাতৃভূমি ত্যাগ করবে না।’ ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক ঘাসান আল-খাতিব বলেন, ‘পশ্চিম তীর ও গাজার ফিলিস্তিনিরা, সেই সঙ্গে জর্ডান ও মিসরীয়রা ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি মনে করি না বাস্তবে এমন ধারণার কোনো জায়গা আছে।’

ট্রাম্পের এই প্রস্তাব

ট্রাম্পের এই প্রস্তাব ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোতরিচ স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এটা দারুণ একটা ধারণা।’ তিনি এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে পরিকল্পনা করবেন বলেও জানান। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বরাবরই বেজালেলের এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন।

ট্রাম্প জানান

ট্রাম্প জানান, তিনি জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও কথা বলবেন। তবে উভয় দেশই ফিলিস্তিনিদের তাদের দেশে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে।

গাজা ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিরা ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে থাকতে চান। তারা তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছেন এবং অন্য যেকোনো কারণেও গাজা ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যুতি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও ফিলিস্তিনি স্বাধিকার আন্দোলনের জন্য হুমকি স্বরূপ। তারা আরও বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ফলে সৃষ্ট মানবিক সংকটের মধ্যে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তারা তাদের ভূমি ও পরিচয় রক্ষার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে

ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণ, মিসর, জর্ডান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতারা একযোগে অবস্থান নিয়েছেন। তারা ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি রক্ষার অধিকারকে সমর্থন করছেন এবং যেকোনো জোরপূর্বক স্থানচ্যুতির প্রচেষ্টার বিরোধিতা করছেন।

ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও সংলাপ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও স্বাধিকার নিশ্চিত করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি।

ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি জনগণ ও নেতারা তাদের মাতৃভূমি রক্ষার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি ছাড়বে না এবং যেকোনো জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবে।

ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি রক্ষার সংগ্রাম

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হলো ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও স্বাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার করা।

ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি রক্ষার সংগ্রাম ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় বিশ্ববাসীর সমর্থন ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এই সমর্থন ও সহযোগিতা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।

ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি রক্ষার সংগ্রাম ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় বিশ্ববাসীর সমর্থন ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এই সমর্থন ও সহযোগিতা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button