কুলাউড়া সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে কুপিয়ে হত্যা
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এওলাছড়া বস্তি এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এক বাংলাদেশি যুবককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে এওলাছড়া বস্তি এলাকার শূন্যরেখার কাছে এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
নিহত আহাদ আলী (৩৪) এওলাছড়া বস্তি এলাকার ইউনুছ আলীর ছেলে। এ ঘটনায় তার স্ত্রী জমিরুননেছা বাদী হয়ে রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ভারতীয় নাগরিকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ জানান, হত্যার ঘটনায় ভারতীয় নাগরিক হায়দার আলীসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন। নিহত আহাদ আলীর লাশ সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে, সেখানে ময়নাতদন্ত করা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এওলাছড়া বস্তির বিপরীতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ইরানী থানা এলাকা। আহাদের শ্বশুরবাড়ি সীমান্তের ওপারে অবস্থিত, যেখানে ভারতের কাঁটাতারের বাইরে তাদের কিছু জমি রয়েছে। হায়দার আলী নামের এক ভারতীয় নাগরিক ওই জমি বর্গা নিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি নিয়মিত বর্গা বাবদ টাকা পরিশোধ করছিলেন না। এ নিয়ে আহাদের সঙ্গে হায়দার আলীর বিরোধ চলছিল।
রোববার দুপুরে হায়দার আহাদকে সীমান্তে ডেকে নেন। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হায়দার ও তার কয়েকজন সহযোগী ধারালো অস্ত্র দিয়ে আহাদকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় আহাদকে উদ্ধার করে প্রথমে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে সন্ধ্যায়
সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় তিনি মারা যান।
কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিলভেস্টার পাঠাং জানান, শ্বশুরবাড়ির জমি নিয়ে বিরোধের জেরেই আহাদকে কোপানো হয় বলে এলাকাবাসী তাকে জানিয়েছেন।
ঘটনার পর রোববার বিকেলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এওলাছড়া বস্তি সীমান্ত বিজিবির ৪৬ ব্যাটালিয়নের আওতায় পড়ে। এ বিষয়ে জানতে বিজিবির স্থানীয় মুরইছড়া ক্যাম্পের সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।
এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। পুলিশ ও বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক রয়েছে।
সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে। সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
নিহত আহাদ আলীর পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তারা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের সহিংস ঘটনা প্রতিরোধে উভয় দেশের সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার, স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এ ঘটনায় পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নজরদারি অব্যাহত থাকবে। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জনগণের নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করতে উভয় দেশের সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে উভয় দেশের সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নিহত আহাদ আলীর আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।